+91 9330828434 +91 9804424251 banglalivenews@gmail.com

করোনা নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও হাওড়ায় হেনস্থা মহিলা সাংবাদিকদের

সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী - August 13, 2020 11:38 pm - রাজ্য

করোনা নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও হাওড়ায় হেনস্থা মহিলা সাংবাদিকদের

করোনা আবহে সামনের সারির কোভিড যোদ্ধাদের হেনস্থা ও সামাজিক বয়কট চলছেই। কখনও কটূক্তি করা হচ্ছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের। কখনও বা সামাজিক বয়কটের মুখে পড়ছেন অন্যান্য প্রথম সারির করোনা যোদ্ধারা। এবার হাওড়ায় করোনা সন্দেহে হেনস্থার শিকার হলেন এক মহিলা সাংবাদিক। অর্পিতা লাহিড়ী নামে ওই মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগ, তিনি করোনা নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে বাড়ি ঢুকতে বাধা দেন বাড়ির শরিকি সদস্যরা। অকথ্য ভাষায় অশ্রাব্য গালিগালাজ করা হয় বলেও তাঁর অভিযোগ।

জানা গেছে, ৭ আগস্ট জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন রামরাজাতলার নন্দীপাড়া এলাকার বাসিন্দা অর্পিতা। তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয় হাসপাতালের তরফে। সেই টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। চিকিৎসার পরে তাঁকে ১১ আগস্ট হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। বিপত্তি বাঁধে তারপরেই। হাসপাতাল থেকে ফিরে বাড়িতে ঢুকতে গেলে বাড়ির এক শরিক পরিবারের সদস্যরা পথ রোধ করে দাঁড়ায়। হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ অর্পিতা লাহিড়ীর। তিনি বলেন, একপ্রকার জোর করেই বাড়িতে নিজের ঘরে ঢুকে পড়েন তিনি। অভিযোগ, তারপরেও ক্রমাগত চলতে থাকে কটূক্তি। অর্পিতা দেবী নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় এরপরেই তিনি পুরো বিষয়টি জগাছা থানার অফিসার ইনচার্জকে হোয়াটসঅ্যাপ করে জানান। আশ্বাস মেলে পুলিশের তরফে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগে লকডাউনের প্রায় শুরুর দিকে হাওড়ারই এক মহিলা চিত্রসাংবাদিক পাড়াপড়শি, প্রতিবেশীদের হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন বলে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করেন। সাঁকরাইলের বাসিন্দা চিত্রসাংবাদিক রণিতা রায় তাঁর ফেসবুক পোস্টে জানান, জাকার্তা থেকে একটি ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে ২১ মার্চ কলকাতায় ফেরেন তিনি। ১৪ দিন তাঁর হোম কোয়ারেন্টাইন হয়। হোম আইসোলেশনের তৃতীয় দিনে সকালে তাঁর ঘুম ভাঙে পাড়া-প্রতিবেশীদের হইহট্টগোলে। তিনি জানান, একদল ব্যক্তি তাঁদের বাড়ির সামনে জমায়েত করে রীতিমতো চেঁচামেচি করতে থাকে। তারা দাবি তোলে, যেহেতু রণিতা বিদেশ থেকে ফিরেছেন তাঁকে বাড়িতে থাকতে দেওয়া যাবে না। পরে ব্যাপারটি মিটমাট হলেও রণিতা প্রশ্ন তোলেন, যারা সেদিন এমন হট্টগোল করেছিল, তারাই কিন্তু লকডাউনে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং না মেনে জমায়েত করে সারাদিন তাস খেলেছে পাড়ায়।

প্রশাসন যেখানে বারবার আমজনতার কাছে আবেদন করছে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা রোগীর সঙ্গে না করে রোগের সাথে করতে হবে, তারপরেও জনগণের সচেতনতা, হুঁশ ফিরছে কই? কখনও স্রেফ করোনা সন্দেহের বশে, কখনও বা করোনা নেগেটিভ হওয়া সত্ত্বেও, কখনও আবার বিদেশ থেকে ফেরার ‘অপরাধে’ হেনস্থা ও কটূক্তির শিকার হতে হচ্ছে করোনা-কালে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের মতো সামনের সারির কোভিড যোদ্ধাদের। এমনকি মহিলা হলেও তাঁদের রেয়াত করা হচ্ছে না।

তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, অনেকে কিন্তু নিজেরাই করোনা বিধি মানছেন না। অথচ তাঁরাই আবার অবতীর্ণ হচ্ছেন সমাজের নীতি-পুলিশের ভূমিকায়। ‘আপনি আচরি ধর্ম…”-র পরিবর্তে অন্যকে হেনস্থা করাই এখন এই সমাজের একাংশের দস্তুর হয়ে গেছে বলে মত অনেকের। তাঁদের এও প্রশ্ন, সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাই যদি এমন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, হেনস্থা, কটূক্তি ও সামাজিক বয়কটের শিকার হন, তাহলে আমজনতার অবস্থা সহজেই অনুমেয়।

সাংবাদিক অর্পিতা লাহিড়ী (ছবি: সংগৃহীত)

 চিত্রসাংবাদিক রণিতা রায় (ছবি: সংগৃহীত)

সাংবাদিক অর্পিতা লাহিড়ীর হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের প্রতিলিপি (ছবি: সংগৃহীত)


আরও পড়ুন:

Follow Bangla Live on Facebook

Follow Bangla Live on YouTube