বিদ্যাসাগরের জন্মের দুই শ বছর
স্টেশনে নেমে এক ভদ্রলোক হাতের ছোট্ট ব্যাগটা নিয়ে ডাকছেন, এই কুলি, কুলি। এগিয়ে গেলেন ধুতি পরা, পায়ে চটি, একজন। তিনি ব্যাগটা এগিয়ে দিতে লাগলেন। ভদ্রলোক যখন তাঁকে পয়সা দিতে গেলেন, তিনি বললেন, ‘আমি কুলি না। আপনাকে সাহায্য করলাম। আমার পয়সার দরকার নেই।’ ভদ্রলোক খোঁজ নিয়ে জানলেন, এই সাহায্যকারীর নাম ঈশ্বরচন্দ্র। সবাই তাঁকে ডাকে বিদ্যাসাগর বলে।
বিদ্যাসাগর ছিলেন পণ্ডিত। আবার ভীষণ কাজের লোক। স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন, পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। বাংলা গদ্য নির্মাণে তাঁর অবদান সবাই স্বীকার করেন। বিধবা বিবাহ প্রচলন করেছেন। আবার তিনি ছিলেন দয়ার সাগর।
কিশোর আলোর সেপ্টেম্বর সংখ্যার প্রচ্ছদরবীন্দ্রনাথের এই বিখ্যাত উক্তিটি তাঁর সম্পর্কেই করা: ‘আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না, আড়ম্বর করি, কাজ করি না, যাহা অনুষ্ঠান করি তাহা বিশ্বাস করি না, যাহা বিশ্বাস করি তাহা পালন করি না, ভূরি পরিমাণ বাক্য রচনা করিতে পারি, তিলপরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না, আমরা অহংকার দেখাইয়া পরিতৃপ্ত থাকি, যোগ্যতালাভের চেষ্টা করি না, আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি, পরের অনুকরণে আমাদের গর্ব, পরের অনুগ্রহে আমাদের সম্মান, পরের চক্ষে ধূলিনিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিকস এবং নিজের বাক্চাতুর্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহ্বল হইয়া ওঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। এই দুর্বল, ক্ষুদ্র, হৃদয়হীন, কর্মহীন, দাম্ভিক, তার্কিক জাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের এক সুগভীর ধিক্কার ছিল। কারণ, সর্ববিষয়েই তিনি ইহাদের বিপরীত ছিলেন।’
২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ সালে বিদ্যাসাগরের জন্ম। তাঁর জন্মের দুই শ বছর উপলক্ষে তাঁকে স্মরণ করি।