মুকুল-দিলীপ নয়, একুশে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেবেন স্বয়ং ‘চাণক্য’
২০২১-এ বাংলায় বিজেপির মুখ কে হবে, তা নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন বাংলায় কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি ২০২১-এর নির্বাচনে লড়বে না। বিজেপির মুখ হবেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু দিল্লিতে বঙ্গ বিজেপির রণনীতি নির্ধারণ বৈঠকে স্পষ্ট হয়ে গেল একুশের নির্বাচনের বিজেপিকে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন খোদ অমিত শাহ।
নির্বাচনকে পাখির চোখ অমিত শাহের
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন পর অমিত শাহ সর্বভারতীয় সভাপতির পদত্যাগ করেছিলেন। এক নেতা এক পদ নীতিকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন। বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব এসেছিলেন জে পি নাড্ডা। কিন্তু তার আগে থেকেই বাংলার নির্বাচনকে বিশেষ প্রাধ্যান্য দিয়ে এসেছেন অমিত শাহ। এখনও তিনি বাংলার নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছেন।
মুকুল রায় না দিলীপ ঘোষ? চর্চা শেষ
দিল্লি বৈঠকের আগে চর্চা চলছিল, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কার নেতৃত্বে লড়বে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিটির মাতায় কে থাকবেন- মুকুল রায় না দিলীপ ঘোষ? অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মুকুল রায়ের সম্ভাবনাই কথাই জানিয়েছিলেন। কেননা মুকুল রায় পূর্ববর্তী দুটি নির্বাচনে বিজেপিকে নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন।
মুকুল বা দিলীপ নন, বাংলার নেতৃত্বে বিজেপির চাণক্য
এখন আবার দলে গুরুত্ব বাড়িয়ে মুকুল রায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি হয়েছেন। ফলে তাঁকে নেতৃত্ব দিয়ে অমিত শাহ এবার বাংলার দায়িত্ব বণ্টন করে দেবেন সকলের মধ্যে এমনটাই ভেবেছিলেন বঙ্গ রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু তা হয়নি। মুকুলের হাতেও ব্যাটন ওঠেনি ২০২১ নির্বাচনের। আর দিলীপ ঘোষকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
অমিত কেবল বাংলায়
এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য স্বয়ং বিজেপির প্রস্তুতি এবং প্রচারের তদারকি করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনিই এবার নেতৃত্ব দেবেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা অন্যান্য রাজ্য ইউনিটগুলি তত্ত্বাবধান করবেন এবং বিহারের মতো রাজ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি তদারকি করবেন। অমিত শাহ কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে মনোনিবেশ করবেন।
তৃণমূল কংগ্রেস একটু হলেও কোণঠাসা হল। আবার এক ঢিলে দুই পাখি মারা হল!
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য স্বয়ং বিজেপির প্রস্তুতি এবং প্রচারের তদারকি করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হল বলেই মনে হয়। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল থামানো যাবে, আর তৃণমূল কংগ্রেসকেও চিন্তায় ফেলা যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে ও নেতা হিসাবে অমিত শাহকে সমীহ না করে উপায় নেই।
দুর্গাপুজোর পর কলকাতায় বসে কর্মকাণ্ডের তালিকা!
বিজেপির সর্ববভারতীয় নেতৃত্ব জানিয়েছে, অমিত শাহ দলীয় সভাপতি থাকাকালীন বঙ্গ বিজেপি ইউনিটের বিশেষ যত্ন নিয়েচেন এবং ২০২১-এর দলের নির্বাচনের ব্যবস্থাপনার জন্য দায়বদ্ধ রাজ্য কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে বেছেও নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে নাড্ডার বাসভবনে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে শাহ দুর্গাপুজোর পর কলকাতায় আসবেন এবং রাজ্য বিজেপির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কর্মকাণ্ডের তালিকা তৈরি করবেন।
অমিত শাহ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো নির্বাচন সামলাবেন
এই মর্মে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা এবং অন্যান্য প্রবীণ কেন্দ্রীয় নেতারা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়-সহ বঙ্গ বিজেপির অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে প্রায় চার ঘন্টা আলোচনা করেন। সেখানেই ঠিক হয় রূপরেখা। এবার অমিত শাহ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো নির্বাচন পরিকল্পনা করতে চাইছেন।
২০২১ পাখির চোখ, এবার আলাদা করে ভাবছেন শাহ
রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, অমিত শাহ চান বিজেপি বাংলা-জয়ের জন্য সেরাটা দিয়ে ঝাঁপাক। তিনি দলীয় সভাপতি থাকাকালীন বঙ্গ বিজেপিকে নিজে হাতে তৈরি করেছেন, এখনও করছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে রাজ্য কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ করে বুঝিয়ে দেন, এবার তাঁদের পাখির চোখ ২০২১। তাই একটু আলাদা করে ভাবতে হচ্ছেই।
দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়কে বিশেষ পরামর্শ শাহের
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়কে নির্দিষ্ট ইস্যুতে রাজনৈতিক তৎপরতা তীব্র করতে পরামর্শ দেন অমিত শাহ। রাজ্য নেতাদের প্রত্যেকেই তাঁর মতো করে রাজ্যের পরিস্তিতি বর্ণনা করেন অমিত শাহের সামনে। এরপর ঠিক হয় পুজোর পর অমিত শাহ কলকাতায় বিজেপি রাজ্য কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবেন।