মুর্শিদাবাদে মাতৃ মা তে দুর্ভোগ
– মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজের মাতৃ মা বিভাগে গর্ভবতী মায়েদের অবস্থা যথেষ্ট দুর্বিষহ। সম্প্রতি একজন প্রসূতির মৃত্যু ঘটনায় মাতৃ মা তোলপাড়। নার্সদের দুর্ব্যবহার ও অব্যবস্থা এখনও অব্যাহত। প্রসূতির বাড়ীর লোকজনদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে—
১) মাতৃ মা তে ভর্তি হবার টিকিট ঘর নেই। প্রসূতিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করতে গেলে অনেকটা দূরে মেডিকেল কলেজের সাধারণ বিভাগে টিকিট করতে যেতে হয়।
২) প্রসূতি লেবার রুমে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরালেও অমানুষিক ব্যবহার করা হয়। অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার জন্য দীর্ঘসময় অসহ্য ব্যথা ও অসহায়তা নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। আগে মাতৃসদনে ইউ এস জি করে গর্ভে শিশুর অবস্থান দেখে নিতো। এখন মাতৃ মা তে গ্লাভস পরে হাত জড়ায়ুতে ঢুকিয়ে দেখা হচ্ছে। মায়ের চরম যন্ত্রণা হচ্ছে। ভয় পেলে ডাক্তার প্রসূতিকে তুই তুকারি ভাষায় বলছে, ”আ্যই ন্যাকামি হচ্ছে, খোল, কাপড় খোল। প্রথমবার কাপড় খুলছিস নাকি ?
৩) প্রসূতিকে সিজার করে পেস্টিং সেলাই দিচ্ছে না। লায়লন সুতো দিয়ে ধর তক্তা মার পেরেক গোছের সেলাই করা হচ্ছে। ফলে মায়েদের সেলাই শুকোতে দেরি হচ্ছে, যন্ত্রণা হচ্ছে। ছয়দিনের দিন সেলাই কাটার সময়ও যথেষ্ট গাফিলতি করছে। অনেক মায়ের সেলাইয়ের সুতো লেগে রয়েছে। এতে ব্যথা ও পুঁজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
৪) অপারেশন থিয়েটারে ডেলিভারি হওয়ার আগে ও পরে রিতীমতো হুমকি দিয়ে কিছু মহিলা ও পুরুষ কর্মচারী মা এর সঙ্গে থাকার অনুমতি পাওয়া বাড়ীর মহিলার কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে নিচ্ছে। গরীব মানুষ ভয় পেয়ে দিচ্ছে। পাছে তার ও বাচ্চার কোনো ক্ষতি করে।
৪) মাতৃ মা তে বর্তমানে আয়া ঢুকতে দেওয়া হয়না। বিগত দিনে বাচ্চা চুরি হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে। তাই নাকি এই পদক্ষেপ। ভালো কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মায়ের সঙ্গে একজন বাড়ীর মহিলা নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক। কিন্তু যে মায়ের কেউ নেই সে কি করবে ? মায়ের সঙ্গে আনা বাধ্যতামূলক উক্ত মহিলা টি কোথায় দাঁড়াবে, কোথায় বসবে, কোথায় শোবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। উল্টে তাদের হাসপাতালের নার্স ও সাফাইকর্মীদের কাছ থেকে তুই তুকারি, খিস্তি গালাগাল, দূরছাই শুনতে হচ্ছে। নার্সদের দুর্ব্যবহার তাদেরকে অরাজকতার রাজ্যের কথা মনে করাচ্ছে। নার্সদের যেন কোনো মানবিকতা নেই। সভ্য মানুষের সমাজে বোধহয় এরা থাকেনা। এরা মানুষ কে মানুষ বলে মনে করে না। মানুষের ন্যূনতম সম্মান মর্যাদা এরা দিতেই জানেনা। দরীদ্র মানুষ অসহায় হয়ে মাতৃ মা তে চিকিৎসা নিতে এসেছে বলে এই রকম অমানুষিক মানসিক নির্যাতন তাদের প্রাপ্য ? মায়ের বাড়ীর মহিলারা বারান্দার একপাশে ঠাঁই নিয়ে একটু শোয়ার ব্যবস্থা করেছে কি সাফাইকর্মীরা তাদের ব্যাগ ও বিছানায় জল ঢেলে দিচ্ছে। অপমানে, লজ্জায় তাদের চোখ দিয়ে জল পড়ছে। অনেকে এমনও বলেছে, “এই নরকপুরীতে যেন আর না আসতে হয়।” তাহলে এই জন্যই নার্সরা ইচ্ছাকৃত এই দুর্ব্যবহার করছে ?
৫) ডেলিভারি হবার পর ব্যথা উপশম না হতে এবং মেয়াদের আগে জোর করে নার্সরা কষাইয়ের মতো টেনে হিঁচড়ে ক্যাথিট্রা টেনে খুলে দিচ্ছে।
৬) মাতৃ মা বিভাগে ঢোকার মুখে জুতো খুলে প্রবেশের জন্য জুতো রাখার জায়গা থাকা সত্ত্বেও গেটের সামনে অসংখ্য জুতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেসকল এক্স মিলিটারি কর্মীরা গেটে ডিউটি করছে তাদের অনুশাসন এতোটাই রুঢ় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা মায়ের সঙ্গে ও মায়ের সঙ্গে আসা লোকজনদের সঙ্গে তুই তুকারি সম্বোধনে ধমক ধামক দিতে এবং মাঝে মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জুতোগুলোকে লাত্থি মেরে সরিয়ে দেবার ব্যাপারে আ্যতোটাই ব্যস্ত যে মানুষের উদ্দেশ্যে একটা সাইনবোর্ড লিখে জুতো রাখার জায়গায় জুতো রাখতে এবং নমনীয় ভাবে নির্দেশ দানের ক্ষেত্রে উদাসীন। এরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে বিদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করবার বিষয়ে যদি আ্যতোটা রুক্ষ হোতো তাহলে ভারতের উপকার হোতো। সিভিল জায়গায় ডিউটি করার জন্য এদের ট্রেনিং প্রয়োজন। এক্স মিলিটারি ডিউটি কর্মীদের দৃষ্টিতে ডাক্তার, নার্স, সাফাইকর্মী ও অন্যান্য কর্মচারীদের জুতোর নীচে গু থাকলে সেটা ক্ষীর হয়ে যায় আর গর্ভবতী মায়ের বাড়ীর মহিলাদের জুতোর নীচে যদি ক্ষীরও থাকে তাহলে গু হয়ে যায়। কারণ ওরা অনায়াসে জুতো পরে ঢুকছে আর বের হচ্ছে। আর এদের কে খালি পায়ে ঢোকাচ্ছে। আর এক্স মিলিটারি নিজেরা বুট পরে হাসপাতালের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে।
হাসপাতাল চত্বরে গর্ভবতী মায়েদের বাড়ীর লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে। তারপর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপারের কাছে এই সংক্রান্ত ত্রুটির বিষয়ে জানতে গেলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। আগ বাড়িয়ে মাতৃ মা বিভাগের নোডাল অফিসার রিতীমতো উত্তেজিত হয়ে রুঢ় ভাষায় জানান যে, “তারা এখন করোনা নিয়ে বেশী ব্যস্ত রয়েছেন। পারলে যেন কেউ অভিযোগ দাখিল করে।” তার একথার অর্থ ঠিক বোধগম্য হয় নি। সম্ভবত তিনি জানেন যে, এই অভিযোগের কোনো গুরুত্ব নেই। অভিযোগ করেও কিস্যুটি হবে না। চিকিৎসা নিতে আসা একজন জানালেন যে, “মাতৃ মা বিভাগের সব জায়গায় যদি সি সি ক্যামেরা থেকে থাকে তাহলে এই অব্যবস্থাগুলো এবং ডাক্তার, নার্স, সাফাইকর্মী, এক্সমিলিটারি ডিউটি কর্মীদের ও অন্যান্য কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার সব ক্যামেরা বন্দী থাকবে নিশ্চয়ই।” সুপারের কাছে বিষয়গুলো জানার জন্য গেলে তার এবং নোডাল অফিসারের সঙ্গে কথোপকথনও নিশ্চয়ই সি সি ক্যামেরায় বন্দী আছে আশা করা যায়। বহুজন জানিয়েছেন যে, “মুখ্যমন্ত্রী জননী সুরক্ষা যোজনা তে টাকা আর গাছ না দিয়ে বরং মাতৃ মা তে ডেলিভারি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ভালো ব্যবহারযুক্ত পরিষেবার উন্নয়ন করুন। তাহলেই আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো, খুশী হবো। কিছু অমানুষদের অমানবিক ও আত্মকেন্দ্রিক আচরণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে কলঙ্কিত করছে। এও কি একধরনের চাল ? কি জানি। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।”