+91 9330828434 +91 9804424251 banglalivenews@gmail.com

সপ্তাহের দ্বিতীয় লকডাউনে আরও কড়া পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা - July 26, 2020 10:34 am - কলকাতা

সপ্তাহের দ্বিতীয় লকডাউনে আরও কড়া পুলিশ।

শনিবার দিনভর অতন্দ্র নজরদারিতে দিনভর ঘরবন্দি রইলেন মানুষ। কলকাতা–সহ রাজ্যের সর্বত্রই এদিন সার্বিক লকডাউন হয়। কেউ কেউ নানা অজুহাতে পথে নামলেও পুলিশের মনোভাবের কাছে হার মেনে ফিরতে হয়েছে ঘরে। তারই মধ্যে নিয়ম ভেঙে গ্রেপ্তার হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি।
শুধু কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭০৭ জন। এর মধ্যে মাস্ক ব্যবহার না করায় ৩৬৮ জন, রাস্তায় থুতু ফেলায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৪টি গাড়ি। নিয়ম ভাঙা গাড়ি, বাইক আটকাতে গিয়ে জখম হয়েছেন তিন পুলিশ কর্মী। কোথায় জটলা বা গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি হচ্ছে জানতে কলকাতা পুলিশ এলাকায় ড্রোনে নজরদারি চলে দিনভর। নিয়ম ভাঙার ছবি দেখে মুহূর্তে সেখানে পৌঁছে যায় পুলিশ। বিধাননগরে গ্রেপ্তার করা হয় ১২৩ জনকে। ৭টি গাড়ি, ২৪টি বাইক আটক করা হয়।
সচেতনতার অভাবে বাড়ছে সংক্রমণ। তাই এদিনও যথেষ্ট কড়া ছিল পুলিশ। তাই অকারণে রাস্তায় বের হতে দেখলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিয়ম ভেঙে লকডাউনের মধ্যেই নিমতলা ঘাট স্ট্রিট এলাকায় পথে সাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলেন কয়েকজন। সদুত্তর দিতে না পারায় নিয়ম ভাঙার খেসারতও দিতে হয়। পুলিশ সাইকেলের চাকার হাওয়া খুলে দেয়। গাড়ি, বাইক থামিয়ে জানতে চাওয়া হয় পথে বের হওয়ার কারণ। উত্তর দিতে না পারায় অনেককে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। বড় রাস্তার পাশাপাশি ছোট রাস্তা, গলিতেও ছিল কড়া নজর। ওই সব জায়গায় বাইক নিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। নিয়ম ভাঙতে দেখলেই নেওয়া হয় কড়া ব্যবস্থা। আটক করা হয় জিনিসপত্রও। কয়েকটি জায়গায় মদও বাজেয়াপ্ত করা হয়। কলকাতার শ্যামবাজার থেকে শুরু করে বেহালা, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা— সর্বত্রই ছিল একই রকম কড়াকড়ি।

কলকাতায় ঘুরে ঘুরে এদিন করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা প্রচার চালান লেকগার্ডেন্সের বাসিন্দা শিবু দাস। ঢোল বাজিয়ে শোনালেন সচেতনতার পাঠ। তাঁর মোপেডটি যেন একটি প্রচার গাড়ি। কোথাও ব্যানারে লেখা, ‘‌সাবান দিয়ে ধুলে হাত করোনা হবে কুপোকাত’‌। কোথাও আবার লেখা, ‘‌মাস্ক পরুন, প্রাণে বাঁচুন’‌।
লকডাউনের সকালে বান্ধবীকে নিয়ে জয়রাইড করতে বেরিয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে এক পুলিশ কনস্টেবলকে জখম করে গ্রেপ্তার হলেন রৌণক আগরওয়াল নামে এক যুবক। বাড়ি শরৎ বসু রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, এদিন সকাল ১০টা নাগাদ একটি গাড়ি দ্রুত বেগে সায়েন্স সিটি থেকে রুবি মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। থামতে বলা হলেও চালক গাড়ি থামাননি। অয়্যারলেসে খবর পেয়ে উত্তর পঞ্চান্ন গ্রামের কাছে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করেন কনস্টেবল তন্ময় দাস। ব্যারিকেড দেখে গাড়িটি পিছনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। গাড়িটি আটকে নামতে বলা হলে চালক গার্ডরেলে ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করেন। তন্ময় পায়ে আঘাত পান। গাড়ি, গার্ডরেলের মধ্যে আটকে আহত হন সিভিক ভলান্টিয়ার বাবাই মল্লিক। গাড়িতে ওই যুবক ছাড়াও ছিলেন এক বন্ধু ও এক বান্ধবী। তাঁদের নিয়েই রৌণক ঘুরতে বের হয়েছিলেন। ধৃতকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ২ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া বাইক থামাতে গিয়ে ইষ্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের মেট্রোপলিটন ক্রসিংয়ের কাছে জখম হন ট্রাফিক সার্জেন্ট সন্দীপ ঘোষ।
কলকাতায় দুটি অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বিরুদ্ধে করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা টাকা ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি ক্ষেত্রে বিধাননগরের করুণাময়ী থেকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৯ হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আরেকটি ক্ষেত্রে পার্ক সার্কাস থেকে দুই করোনা আক্রান্ত শিশুকে মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৯ হাজার টাকা চাওয়া হয়। বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে না চাওয়ায় ওই দুই শিশুকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
লকডাউনে আটকে পড়া ভিনরাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের খাবারের ব্যবস্থা করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। সকালে চিঁড়ে–‌মুড়ি, দুপুরে খিচুড়ি, তরকারি। সন্ধের টিফিন, রাতের খাবার খাইয়ে রাত ১০টার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের গন্তব্যের দিকে রওনা করিয়ে দেন পুলিশ কর্মীরা। ওই ২৯ জন শ্রমিক গোয়ায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। লকডাউনে বসে থাকতে হয়েছিল তিন মাস। টাকাপয়সা জোগাড় করে মঙ্গলবার গোয়া থেকে বাস ভাড়া করে রওনা দিয়েছিলেন বাড়ির দিকে। এঁদের বাড়ি ধামাখালিতে, ৩ জন মুর্শিদাবাদের। এদিকে, এদিন বাগুইআটি এলাকায় কিছু দোকান খোলা রাখায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অকারণে বাইরে বেরিয়েছিলেন কয়েকজন। তাঁদের বাড়ি ফেরত পাঠানো হয়। নিউ টাউনে মাঠে খেলতে নেমেছিল বেশ কয়েকজন। পুলিশ খবর পেয়ে তাদের বাড়ি ফেরত পাঠায়।
লকডাউন না মেনে রাস্তায় বের হওয়ায় শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ও ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলায় ৩৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভাঙড়, বারুইপুর, বিষ্ণুপুর, সোনারপুরের বিভিন্ন এলাকায় অনেক আইনভঙ্গকারী গ্রেপ্তারি থেকে বাঁচতে নিজেরাই ওঠবস করে ক্ষমা চেয়ে নেন। বারুইপুরের সীতাকুণ্ডু, কাটাখাল, চম্পাহাটি, পাঁচঘড়া, দক্ষিণ গড়িয়া, ফুলতলা, নলগড়া, পুরাতন বাজার এলাকায় অ্যাকশন স্কোয়াড সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শন করে পুলিশ আধিকারিকরা। নলগড়া, কাটাখাল, নড়িদানায় গাছের তলায়, মাঠে বসে মাস্কবিহীন যুবকদের আড্ডা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
হুগলি জেলা জুড়ে এদিন ছিল কড়া পুলিশি নজরদারি। চুঁচুড়ার খাদিনা মোড় এলাকায় অকারণে রাস্তায় বের হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। রাস্তার মোড় সংলগ্ন চায়ের দোকানে জমেছিল আড্ডা। দ্রুত সেখানে পৌঁছে বেশ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। চুঁচুড়ায় কয়েকটি দোকান খোলা দেখতে পেয়ে সেগুলির শাটার নামিয়ে বন্ধ করে দেয়। ভ্যানরিকশায় সবজি নিয়ে বেরনোয় এক বিক্রেতাকে আটক করে। ভ্যানটি চালিয়ে থানায় নিয়ে যান এক পুলিশকর্মী।‌

বারাসতে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয় পুলিশ। বারাসত হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় লকডাউনের মধ্যেই এক জায়গায় জড়ো হয়ে আড্ডা মারার অভিযোগে বেশ কয়েকজন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভকেও আটক করা হয়। কলোনি মোড়ে আটক করা হয় ২ জনকে।

বঁাকুড়ায় ৫ দিন লকডাউন
আজ, রবিবার থেকে ৫ দিনের লকডাউন শুরু হচ্ছে বঁাকুড়ার তিনটি পুর শহর বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখীতে। বিকেল ৫টায় লকডাউন শুরু। চলবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত। শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, ওই দিনগুলিতে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সবজি মার্কেট, মুদিখানা, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের দোকান খোলা থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য ৪ ঘণ্টার এই ছাড়। অত্যাবশ্যক পরিষেবা এই লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে। যেমন, ওষুধের দোকান, সরকারি–বেসরকারি গাড়িতে রোগী পরিবহণ, চিকিৎসা পরিষেবা, খাবারের হোম ডেলিভারি, মৃতদেহ সৎকার, সর্বোচ্চ ২৫ জনকে নিয়ে বিয়েবাড়ি, সংবাদমাধ্যম, জল পরিষেবা, পেট্রোল পাম্প ইত্যাদি। ‌


আরও পড়ুন:

Follow Bangla Live on Facebook

Follow Bangla Live on YouTube