+91 9330828434 +91 9804424251 banglalivenews@gmail.com

সম্পদে গরিবের অধিকার

August 8, 2020 11:24 pm - ধর্ম

সম্পদে গরিবের অধিকার

সম্পদে গরিবের অধিকার
মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক |

ইসলাম দুস্থ মানবতা, নিঃস্ব-গরিবের স্বার্থ সংরক্ষণের ন্যায়সংগত অধিকার বা হকগুলো ফরজ করে দিয়েছে। ইসলামি অর্থনীতিতে সর্বপ্রকার ধন-সম্পদ বণ্টনের মূলনীতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘ধন-সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত-৭)।

ইসলাম মানবসমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে দিকনির্দেশনা রয়েছে। একশ্রেণির বিত্তবান লোক ধন-সম্পদ ও টাকার পাহাড় গড়বে, আর অপর শ্রেণির গরিব মানুষ চরম ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর কশাঘাতে জর্জরিত হবে, এ ধরনের জঘন্য প্রথা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলাম ধন-দৌলত, অর্থ-সম্পদের উদারতা ও ইনসাফের দ্বারা গরিবের ন্যায্য প্রাপ্য, হতদরিদ্রের হক বা অধিকার ব্যাপকভাবে সংরক্ষিত করেছে। ধনীদের অর্থ-সম্পদের ওপর গরিবের যে হক রয়েছে, পবিত্র কোরআনে তা বারবারই উচ্চারিত হয়েছে, ‘আর তাদের (ধনী লোকদের) সম্পদে অবশ্যই প্রার্থী (দরিদ্র) ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আল-যারিআত, আয়াত : ১৯)।

অন্যদিকে দরিদ্রের স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্যও ধনীদের প্রতি তাদের অধিকারকে নির্দিষ্ট করেছে। ইসলামের অর্থনীতিতে জাকাত-ফেতরা, সদকা ও দান-খয়রাত কেবল গরিবদের বেলায় প্রাপ্য, দরিদ্রদের এগুলো হলো মৌলিক অধিকার। জাকাতের মাধ্যমে অভাবী, দুর্দশাগ্রস্ত, অসহায়, ক্ষুধার্ত, নিঃস্ব, দরিদ্র লোকজনের অভাব-অনটন দূর করা এবং অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করা সম্ভব। ইসলামে জাকাত ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানবসেবা তথা হতদরিদ্র মুসলমানদের আর্থসামাজিক জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা।
জাকাতের মাধ্যমে সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। ধনীরা তাদের উদ্বৃত্ত সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ বছর শেষে জাকাত প্রদান করে মানবসেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। ইসলামি বণ্টন ব্যবস্থায় ধনীরা তাদের ধন-সম্পদের কিছু অংশ দরিদ্রদের জাকাত দিলে গরিবদের সম্পদ কিছুটা বেড়ে যায় এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভূত হয়। এভাবে ধনীর আয়-রোজগার থেকে নির্ধারিত কিছু অংশ কমিয়ে এবং সেই কমানো অংশ হতদরিদ্রদের আয়ের সঙ্গে যোগ করে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জাকাত বণ্টনের ফলে সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা পায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তাদের (সম্পদশালীদের) ওপর সদকা (জাকাত) অপরিহার্য করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

পবিত্র কোরআনে ৩২টি আয়াতে সরাসরি জাকাতের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি আয়াতে সালাতের সঙ্গে জাকাত আদায়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। সব মিলিয়ে ৯০টি আয়াতে কারীমায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জাকাত, সদকা, ফেতরা আর ধন-সম্পদ এবং তা ব্যয়ের বিষয়ে আলোচনা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক হকদারকে তার ন্যায্য অধিকার দিয়ে দাও।’ (বোখারি)। সমাজে দরিদ্রদের মৌলিক অধিকার যেমন ইসলাম স্বীকার করেছে, পাশাপাশি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তাদের সম্মানজনক মর্যাদাও দিয়েছে। নবী করিম (সা.) ফরমান, ‘আমির ও ধনী লোকের ৪০ বছর আগে দরিদ্র বা গরিব লোকেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করবেন, ‘তোমরা দেখ তো, আমার প্রিয় বান্দাকুল কোথায়?’ ফেরেশতারা নিবেদন করবেন, ‘হে রাব্বুল আলামিন! কারা আপনার প্রিয় বান্দা?’ আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তর আসবে, ‘তারা হবে মুসলমান গরিব-দরিদ্র লোক, আমার দানে ও নেয়ামতে তারা পরিতৃপ্ত এবং সন্তুষ্ট ছিল তাদের জান্নাতে নিয়ে যাও।’ আসুন! আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)কে খুশি করি। আমরা অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই, আমার আপনার জাকাত-ফেতরার পয়সায় যেন হাসি ফুটে ভাগ্যাহত মানুষের মুখে। আমিন।


আরও পড়ুন:

Follow Bangla Live on Facebook

Follow Bangla Live on YouTube