+91 9330828434 +91 9804424251 banglalivenews@gmail.com

সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতা - September 5, 2020 3:55 pm - বাংলাদেশ

সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ

গভীর বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ট্রালারভর্তি ইলিশগুলো সকাল থেকেই পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দরে এসে ভিড়ছে। এরপরই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাচ্ছে আড়তদারদের। ট্রলার থেকে ঝুড়িতে করে শ্রমিকেরা ইলিশ এনে আড়তে ফেলছেন। মাপজোখ চলে একদিকে। অন্যদিকে চলে দরদাম। পাইকারি ক্রেতারা দরদাম শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য কার্টনে ভরা শুরু করেন। ট্রাক ও অন্যান্য গণপরিবহনের ছাদে করে সাগরের এসব ইলিশ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
জেলেরা জানান, চলতি বছরের সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। গত ২৩ জুলাই এ সময়সীমা শেষ হয়েছে। করোনার কারণে ওই সময়টা জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগরে নামলেও জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছিল না। তবে এক সপ্তাহ ধরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।

এবারের ইলিশ আকারেও বেশ বড়।
মহিপুরের এফবি মার্জিয়া ট্রলারের জয়নাল মাঝি বলেন, ৮০ হাজার টাকার বাজার করে সাগরে নেমে তিনিও পাঁচ দিন পর গতকাল সকালে ১২০ মণ ইলিশ নিয়ে আলীপুর মাছের আড়তে আসেন। প্রতি মণ ১৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন। দাম পেয়েছেন ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

মহিপুরের এফবি জাহানারা ট্রলারের মালিক মাসুদ মোল্লা জানায়, তাঁর ট্রলার ছোট, গভীর সাগরে যেতে পারেননি। এরপরও সাগরে মাছ পেয়েছেন ৭০ মণ। ১৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে মোট দাম পেয়েছেন ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এফবি রুমান ট্রলারের কুদ্দুস মাঝি জানান, এমনিতেই ধারদেনা ও মহাজনদের কাছ থেকে আগাম দাদন নিয়ে সাগরে নামতে হয় তাঁদের। এত দিন তেমন ইলিশ ধরা না পড়ায় তাঁরা দেনা পরিশোধ নিয়ে তিনি চিন্তায় ছিলেন। এই পূর্ণিমার পর গভীর সাগরে নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার প্রভাব ও সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার পরও তেমন মাছ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জেলেরা। তবে এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে এবং আকারেও বড়। তাই জেলেরা বেশ খুশি।

ট্রলার থেকে ঝুড়িতে করে শ্রমিকেরা ইলিশ এনে আড়তে ফেলছেন
মহিপুর মৎস্য বন্দরের রিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মোস্তফা বলেন, দীর্ঘদিন পর সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই দামও একটু কমে গেছে।

দাম কম প্রসঙ্গে আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আনসার মোল্লা বলেন, হঠাৎ করে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়া, করোনার কারণে রপ্তানি না থাকায় ইলিশের দাম একটু কম। এখন যে ইলিশ ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত বছর দাম ছিল মণপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন আনসার মোল্লা। এ ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে মাছের সুরক্ষার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। জেলেরা উপকৃত হবেন।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ্ বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এই ভবিষ্যতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

সাগরে প্রচুর ইলিশ প্রসঙ্গে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এ বছর করোনা, লকডাউন, আম্পান, সাগরের নিম্নচাপসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জাটকা ধরা, অবৈধ জাল ব্যবহারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ ছিল, প্রাকৃতিক দূষণের পরিমাণও ছিল শূন্যের কাছাকাছি। এতে নদী বা সাগরে মাছের প্রাপ্যতার কোনো কমতি নেই, শুধু প্রতিকূলতার কারণে ধরতে পারেনি। ইতিমধ্যে বাজারে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, আকারও বেশ বড় এবং দামও যথেষ্ট কম। (সূত্র প্রথম আলো)


আরও পড়ুন:

Follow Bangla Live on Facebook

Follow Bangla Live on YouTube