২১ দিন ধরে মর্গে বিজেপিকর্মী মদন ঘড়ুইয়ের দেহ পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস দিলেন অমিত শাহ
কলকাতায় পা রাখার পরপরই রাজ্য বিজেপি–র সকল কর্মী–সমর্থকের পাশে যে তিনি আছেন তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি–র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত সাহ। বুধবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে রাজারহাটের হোটেলে পৌঁছনোর পর তিনি পুলিশি হেফাজতে মৃত পটাশপুরের বিজেপি–র বুথ সহ সভাপতি মদন ঘড়ুইয়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের সুবিচারের আশ্বাস দেন অমিত শাহ। পাশে ছিলেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অনুপম হাজরারা।
এদিন প্রয়াত মদন ঘড়ুইয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদনপত্র অমিত শাহয়ের হাতে তুলে দেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাতে ঘটনার বিবরণী জানিয়ে সুবিচারের দাবি জানায় মৃতের পরিবার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রীকে এদিন জানানো হয় যে বিগত ২১ দিন ধরে মর্গে পচছে ওই বিজেপি কর্মীর দেহ। কলকাতা হাইকোর্ট দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিলেও এখনও তা করা হয়নি। সব শুনে মৃতের পরিবারকে অমিত শাহ বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি দেখছি কী করা যায়।’ এর পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন মদন ঘড়ুইয়ের পরিবারের লোকজন। অমিত শাহয়ের পা ধরতে এগিয়ে যান এক মহিলা। তাঁকে সামলাতে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিন একটি টুইটে এই সাক্ষাতের কথা জানান অমিত শাহ। তিনি লিখেছেন, ‘শহিদ বুথ সব সভাপতি মদন ঘড়ুইয়ের পরিবারের সঙ্গে এদিন কলকাতায় দেখা করলাম। আমি তাঁর সাহসী পরিবারকে প্রণাম জানাই। পশ্চিমবঙ্গে নৃশংসতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে যে কার্যকর্তারা সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকার করেছেন বিজেপি তাঁদের সকলের কাছে ঋণী থাকবে।’
উল্লেখ্য, ভাইপোর বিরুদ্ধে নাবালিকা অপহরণের অভিযোগ থাকায় ২৬ অক্টোবর মদন ঘড়ুইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, গত ১৩ অক্টোবর পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। ১৫ অক্টোবর এসএসকেএম হাসপাতালে মৃতের ময়নাতদন্ত হয় এবং ওদিনই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাঁর দেহ। ১৬ অক্টোবর তাঁর দাদা স্বপন ঘড়ুই পুলিশের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ওদিনই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে দেহের ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে, মৃতের দেহ নিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি হয় কলকাতায়। দলের রাজ্য সদর দফতরের সামনে দেহ নিয়ে হাজির হয় বিজেপি। সেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান দলের কর্মীরা। এরপর বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে কিছুটা এগোতেই বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় সরণির মোড়ে তাঁদের আটকায় পুলিশ।এরপর পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন লকেট ও বিজেপি কর্মীরা।
এর পর ২০ অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ ফের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। যদিও সেই নির্দেশ মেনে এখনও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করেনি রাজ্য সরকার। ২৪ অক্টোবর ফের মামলা করা হয় আদালতে। এবার আদালত ৫ নভেম্বরের মধ্যে ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিনের আবেদনপত্র এই পুরো ঘটনার বিবরণী জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।