অম্বিকা কালনা
ভাগীরথীর তীরে অম্বিকা কালনা। এখানে অম্বিকা দেবীর মন্দির ও তৎসংলগ্ন রাসমঞ্চ উল্লেখযোগ্য। দেবীর নামেই স্থানের নামকরণ হয়েছে। মধ্যযুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের বহু নিদর্শন এখানে রয়েছে। একই সঙ্গে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং জৈন সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অবশ্য অধিকাংশ মসজিদই তৈরি হয়েছিল হিন্দু দেবালয়ের ভগ্নাবশেষ দিয়ে। আবার অনেকের বিশ্বাস, অম্বিকা দেবীর মন্দির আদিতে জৈন মন্দির ও এখানে জৈন দেবতা ছিলেন। কালনার মুসলমান যুগের নিদর্শনগুলি তুর্কি আফগান রাজত্বকালের। এই সময় ইসলাম সংস্কৃতির প্রসিদ্ধ কেন্দ্র হয়ে ওঠে কালনা। পাঁচশো বছর আগে তৈরি ফিরোজ শাহের মসজিদ। শিলালেখ অনুযায়ী, ১৫৩৩ সালে ফিরোজ শাহের আমলে তৈরি। মসজিদের মাথার গম্বুজ ও মিনারগুলি এখন ভেঙে পড়েছে। নসরৎ শাহের মসজিদ এবং মজলিশ সাহেবের মসজিদের খিলান স্থাপত্যশিল্পের উৎকর্ষ প্রমাণ করে মুসলিম সংস্কৃতির কথা। একই সময় কালনা বৈষ্ণব সংস্কৃতিরও প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে শ্রীচৈতন্য ও নিত্যানন্দের প্রভাবে। রাজা চিত্রসেন ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চারচালাবিশিষ্ট মন্দিরটির গঠনশৈলী অত্যন্ত সুন্দর। দেবী দারুনির্মিত ও চতুর্ভুজা। তার পর প্রতিষ্ঠিত হয় কালনার বিখ্যাত শিবমন্দির। এখানেও ১০৮টি শিবমন্দির রয়েছে এবং মন্দিরের শিবের রঙ শুভ্র। বর্ধমান রাজবংশের আরও বহু কীর্তি আছে কালনায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লালজির মন্দির ও তার কারুকার্য, কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির ও জলেশ্বর মন্দির। লালজির মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ। লালজি মন্দিরের টেরাকোটার কাজ প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন। পঁচিশ চূড়া বিশিষ্ট শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরের টেরাকোটার কাজও অপূর্ব।
উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য: ১০৮ শিবমন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, রাসমঞ্চ, লালজি মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্রজি মন্দির, পঞ্চরত্নশিব মন্দির, শ্রীশ্রী অম্বিকা সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির। হাতে একটু বেশি সময় থাকলে ঘুরে নেওয়া যায় গোপালজিমন্দির, বিজয়বৈদ্যনাথ মন্দির, আমলিতলা, মহাপ্রভুবাড়ি, শ্যামসুন্দরবাড়ি, জগন্নাথমন্দির, অনন্তবাসুদেবমন্দির প্রভৃতি। ফোটো তোলার জন্য আদর্শ প্রতাপেশ্বর মন্দিরের টেরাকোটার অলঙ্করণ এবং ১০৮ শিবমন্দিরের অনবদ্য গঠনশৈলী। মন্দিরগুলি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে বেশ কিছু মন্দিরের গর্ভগৃহ দুপুরে অল্প সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। কলকাতা থেকে অম্বিকা কালনা ঘুরে দেখতে রাত্রিবাসের কোনও প্রয়োজন হয় না। নিজেদের গাড়িতে বা ট্রেনে গেলে স্থানীয় রিক্সা ভাড়া করে সমস্ত দ্রষ্টব্যস্থান ভালো ভাবে দেখে অনায়াসে সন্ধ্যার মধ্যে কলকাতা ফেরা যায। তবুও থাকতে চাইলে পুরসভার টুরিস্ট লজ আছে।
কলকাতা থেকে লোকাল ট্রেনে অম্বিকা-কালনা পৌঁছনো যায়। সব থেকে ভালো হাওড়া বা শিয়ালদহ কাটোয়া লোকাল। সড়কপথে কলকাতা থেকে জি টি রোড/ দিল্লি রোড ধরে ব্যান্ডেল পৌঁছে সেখান থেকে আসাম-লিঙ্ক রোড ধরে কালনা প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ।