নজরদারির অভাবে খোলাবাজারে খোকা ইলিশ বিক্রির রমরমা, বিপন্ন ইলিশের প্রজনন
বাঙালির পাত থেকে কি ইলিশ উধাও হতে চলেছে ? তার কারণ এই মরশুমে যেভাবে খোকা ইলিশ ধরা হচ্ছে এবং তা খোলাবাজারে যথেচ্ছভাবে বিক্রি হচ্ছে তাতে এই আশঙ্কাটাই দেখা দিয়েছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এখনই যদি খোকা ইলিশ ধরার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে এখানে মাছ না পাওয়া যেতে পারে। যদিও রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরীর দাবি ছোট ইলিশ ধরার বিরুদ্ধে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
ফি বছর বর্ষায় ইলিশের দেখা পাওয়া গেলেও এ বছর বর্ষার শেষের দিকেও সেভাবে দেখা নেই। আবার যেটুকু মাছ বাজারে এসেছে তা মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাংলাদেশী ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। তাই চাহিদা অনুযায়ী ইলিশের যোগান না থাকায় মৎস্যজীবীরা খোকা ইলিশ ধরছে।
বকখালি, কাকদ্বীপ, নামখানা, ডায়মন্ড হারবার দীঘা , শঙ্করপুর থেকে প্রতিদিন ইলিশ বোঝাই গাড়ি চলে আসছে হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারে। সেখান থেকে দেড়শ, দুইশ, আড়াইশো গ্রামের ছোট ইলিশ ছড়িয়ে পড়ছে হাওড়া ও কলকাতার সব কটি বড় মাছ বাজারে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৯০ মিলিমিটারের কম জালের সাইজে মাছ ধরা অথবা ৩৫০ গ্রামের কম ওজনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই আইনকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে খোলা বাজারে যথেচ্ছ ভাবে বিক্রি হচ্ছে খোকা ইলিশ। হাওড়া হোলসেল ফিশ মার্কেটের সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ অভিযোগ করেন ডায়মন্ড হারবার সহ বিভিন্ন জায়গায় মাছ ধরার সময় পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির কথা থাকলেও সেখানে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যার ফলে প্রচুর পরিমাণে খোকা ইলিশ বাজারে চলে আসছে। এভাবে যদি ছোট অবস্থায় ইলিশ ধরা হয় তবে ভবিষ্যতে ইলিশের দেখা না পাওয়া যেতে পারে। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের সরকার ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে বছরের দু বার নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং এই আইনকে কঠোরভাবে মানা হয়। আইনভঙ্গকারীদের কঠোর সাজা দেওয়া হয়। তাই ওখানে এখনো বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। আর এখানে নজরদারির অভাব রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ মৎস্যবিদ্যালয় এর অধ্যাপক শিবকিংকর দাস বলেন মৎস্যজীবীরা ছোট সাইজের জাল ব্যবহার করায় ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে। আর এই ইলিশ মাছ ছোট অবস্থায় ধরা পড়ার ফলে ইলিশের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখনই যদি এই ধরনের মাছ ধরা বন্ধ না হয় তবে ইলিশ এই বাংলায় ভবিষ্যতে দেখা না পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে খুচরো মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন কিলো সাইজের ইলিশের দাম অনেক বেশি। দেড় হাজার টাকার কমে নয়। যেটা মধ্যবিত্তের আয়ত্তের বাইরে। তাই খোকা ইলিশের দাম কম হওয়ায় সেটার বিক্রি বেশি। মানুষ যে ভাবেই হোক ইলিশের স্বাদ নিতে চাইছেন।
অন্যদিকে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী জানিয়েছেন তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যারা বেআইনিভাবে ছোট মাছ ধরবেন তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়। এই জিনিসটা তাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারাও চান এই জিনিসটা বন্ধ হোক। তিনি আরো বলেন এ ব্যাপারে মৎস্যজীবী এবং সাধারণ ক্রেতাদের সচেতন করতে প্রচার চালানো হবে।