শিশু শিক্ষা প্রসারে সরাসরি যুক্ত থেকেও বঞ্চনার শিকার মিড ডে মিলের কর্মীরা
রাজ্য সরকার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও পুরোহিত ভাতা দিতে পারে। পূজোয় ক্লাবগুলোকে ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেবে। কিন্তু কেন মিড ডে মিল কর্মীদের বঞ্চনা করে চলেছে এই প্রশ্ন তুলছেন মিড ডে মিলের কর্মী সংগঠন। পাশাপাশি তাদের বেতন বৃদ্ধি, বারো মাসের বেতন সহ ১৩ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। শ্রমিক সংগঠন এ আই ইউ টি ইউ সি অনুমোদিত সারা বাংলা মিড ডে মিল কর্মী ইউনিয়ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কলকাতায় প্রশাসনের কাছে বিক্ষোভ এবং ডেপুটেশন দিয়েছে।
সংগঠন সূত্রে খবর পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার মিড ডে মিল কর্মী রয়েছেন। স্কুলে মিড ডে মিল রান্নাকে কেন্দ্র করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়। তারা প্রত্যেকেই আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু রাজ্য সরকার ক্রমশ তাদের সঙ্গে আর্থিক বঞ্চনা করে চলেছে বলে তাদের অভিযোগ। তারা মাত্র দেড় হাজার টাকা বেতন পান। তাও দশ মাসের বারো মাসের নয়। এছাড়া পিএফ, পেনশন, বোনাস নেই, অবসরকালীন ভাতা নেই, নেই কোন সামাজিক সুরক্ষা নেই। ফলে ক্রমশ তারা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। ২০১৩ সালের পর থেকে এদের বেতন এক পয়সাও বাড়েনি। এই অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে তারা জেরবার হয়ে যাচ্ছেন। অবিলম্বে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে এই মিড ডে মিলের কর্মীদের অবস্থা আরো সঙ্গীন হয়ে পড়বে। দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্দোলন করে এলেও সরকার সেই সমস্যা সমাধানের কোন সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভে ফুটছেন মিড ডে মিলের কর্মীরা। তাদের আরও অভিযোগ মিথ্যা অভিযোগে যখন-তখন এই কর্মীদের বেআইনী-ভাবে ছাঁটাই করে দেয়। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার আরো মারাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার বাজেটে বারবার প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে এবং এই প্রকল্পকে সুকৌশলে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। এর বিরুদ্ধেই মিড ডে মিলের কর্মীরা আরও সুর চড়াচ্ছে।
মিড ডে মিলের কর্মীর আরো জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যে তাদের বেতন বেড়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নির্লিপ্ত রয়েছে। হরিয়ানা রাজ্যে বেতন কেন্দ্রের ৬০০ টাকা সহ মোট ৭০০০ টাকা, কেরলে ৯০০০ টাকা ও তামিলনাড়ু সরকার দেয় বোনাস, ভাতা, সবেতন ছুটি, রাজ্য সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা সহ ১২,৫০০ টাকা। এই রাজ্যে তা মাত্র ১৫০০ টাকা। অঙ্গনওয়াড়ী সহায়িকার মাসে ৬৩০০ টাকা বেতন পান। তাহলে মিড ডে মিল কর্মীদের মাসিক বেতন মাত্র ১৫০০ টাকা কেন? এই প্রশ্নও তারা তুলেছেন। এতে সম কাজে সম বেতনের নির্দেশ লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এইসবের বিরুদ্ধে এবার আরও জোরদার আন্দোলন শুরু করতে চলেছে মিড ডে মিলের কর্মীরা।
মিড ডে মিলের কর্মীরা সরাসরি শিশু শিক্ষার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। মিড ডে মিলের কারণে প্রান্তিক শ্রেণীর শিশুরা বিদ্যালয় মুখি হয়েছে। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তাই শিশু শিক্ষার সহায়ক হিসাবে মিড ডে মিলের কর্মীদের সমস্যা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।