যাত্রী সাধারণের জন্য বঙ্গে চালু হলো হাইপার এক্সপ্রেস ট্রেন বন্দে ভারত।
৩০, ডিসেম্বর হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন পর্বের মধ্য দিয়ে যাত্রী সাধারণের জন্য চালু করা হলো বন্দে ভারত ট্রেন।
এদিন সকালে হাওড়া থেকে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী ১১টা ৪০ মিনিটে ছাড়ে সম্পূর্ণ আধুনিক অত্যাশ্চর্য স্বয়ংক্রিয় বন্দে ভারত ট্রেনটি।
পূর্ব ঘোষণানুযায়ী উদ্বোধন পর্ব অনুষ্ঠান সূচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও আকস্মিক ভাবে তাঁর গর্ভধারিণী মায়ের অকাল প্রয়াণ ঘটনায় তিনি হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছাতে স্বক্ষম না হওয়ায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, রাজ্যপাল সি ভি বোস, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী,বিজেপির সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ,রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার,সাংসদ জগন্নাথ সরকার,হাওড়ার সাংসদ প্রসূন ব্যানার্জি,সহ রেলের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতি তে ভার্চুয়ালির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের শুভ সূচনা করা হয়।
উল্লেখ্য,সপ্তাহে শতাব্দি এক্সপ্রেসের মতোই বন্দে ভারত ট্রেনটি চলবে হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত। তার মাঝে এখনো পর্যন্ত দুটো স্টপেজ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। তা হলো বোলপুর এবং মালদা টাউন।
এদিকে বন্দে ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনটি পেয়ে খুশি মালদার বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে ব্যবসায়ীরা । তাঁদের বক্তব্য,মালদা থেকে সকালে শিলিগুড়ি যাওয়ার পদাতিক এক্সপ্রেস ছাড়া প্রতিদিন আর অন্য কোন ট্রেন ছিল না। এই ট্রেনটি মালদার ওপর দিয়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে এজন্য রেল কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানান জেলার ব্যবসায়ী মহলের সংগঠনের পক্ষ থেকে মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স এর সদস্যরা।
এই ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রীদের হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি আট ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। রাজ্যে এ ধরণের ট্রেন প্রথম হলেও দেশে এই ট্রেনের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ষষ্ঠ।
রেল আধিকারিক সূত্রে জানা গিয়েছে,নীল-সাদা এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত গতির ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাতায়াত করবে।
এতদিন পর্যন্ত ট্রেনে জলপাইগুড়ি যেতে সময় লাগতো কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা। কিন্তু বন্দে ভারত ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রীরা ৮ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে নিউ জলপাইগুড়ি।
যাত্রীদের জন্য যেসব সুযোগ সুবিধা থাকছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে তা হলো ,দূরপাল্লার অন্যান্য মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো পৃথক ইঞ্জিন কোচ নেই এটিতে।তার পরিবর্তে রয়েছে বুলেট ট্রেন বা মেট্রো রেলের মতো ইন্টিগ্রেটেড ইঞ্জিন।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় চলতে পারবে। আর হাওড়া থেকে শিলিগুড়ির মধ্যে এই ট্রেন চলবে ৭২ থেকে ৯০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। রয়েছে স্লাইডিং ফুটস্টেপ সহ অটোমেটিক দরজা যা অনেকটা মেট্রোরেলের মতোই। ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় দরজা তখনই খুলবে যখন ট্রেনটি পুরোপুরি থামবে।আবার দরজা যখন পুরোপুরি বন্ধ হবে তখনই ট্রেনটি চলবে।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের কিছু কোচে হুইলচেয়ার পার্ক করার জন্য জায়গা থাকবে,যাতে বিশেষ ভাবে সক্ষম যাত্রীদেরও কোনও ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়। নতুন এই এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১৬টি চেয়ার কার কোচ রয়েছে।
যেখানে অনেকটা প্লেনের মতো দুই ধরনের বসার আসন। একটি ইকোনমি,অন্যটি এক্সিকিউটিভ ক্লাস। এক্সিকিউটিভ ক্লাসে ঘূর্ণায়মান চেয়ার রয়েছে যা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে। যাত্রীরা নিজেদের ইচ্ছামতো বসার চেয়ার যেদিকে খুশি ঘুরিয়ে নিতে পারবেন।
ট্রেনে স্যানিটেশনের সমস্যা সমাধানের জন্য বন্দে ভারতে বায়ো-ভ্যাকুয়াম টয়লেট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে,সঙ্গে ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য দুই ধরনেরই শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে। বন্দে ভারত ট্রেনের সবকটি বগিতেই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে, যাতে যাত্রীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া যায়। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য যাত্রীদের অনবোর্ড ওয়াই-ফাই অ্যাক্সেস সরবরাহ করবে।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে জিপিএস ভিত্তিক উন্নত যাত্রী তথ্য ব্যবস্থাও রয়েছে যা যাত্রীদের আসন্ন স্টেশন এবং তথ্য সম্পর্কে সব সময় সতর্ক করবে। এই ট্রেনে যাত্রীদের টিকিটের মূল্যের সঙ্গেই খাবারের দাম ধরা থাকবে। যাত্রীরা সময়মতো নিজেদের আসনেই খাবার পাবেন।
হাওড়া থেকে শিলিগুড়িগামী যাত্রীদের বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চ পরিবেশন করা হবে। আর শিলিগুড়ি থেকে হাওড়াগামী বন্দে ভারত এই এক্সপ্রেসে যাত্রীদের টি-টিফিন এবং ডিনার পরিবেশন করা হবে বলে জানা গেছে।