কলকাতাতেই বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন সুনীল ছেত্রী।
কলকাতাতেই বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন সুনীল ছেত্রী। ১৯ বছর আগে এখান থেকেই শুরু করেছিলেন পেশাদার জীবন। উজ্জ্বল ফুটবল জীবনের ইতিও টানলেন সেই যুবভারতীতেই। তবে বিদায়টা খুব যে সুখকর হল, সেটা নয়। দলকে বিশ্বকাপের যোগ্যতাঅর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে তুলে বিদায়ী ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা হল না। সেই জন্যই বোধহয় খেলা শেষ হতেই চুপ করে কিছুক্ষণ মাঠে দাঁড়িয়ে থাকলেন বিদায়ী নেতা। তারপর হাতজোড় করে গোটা স্টেডিয়াম ঘুরে ভক্তদের বিদায় জানালেন। সুনীলের সঙ্গে কাঁদল গ্যালারি। মাঠ প্রদক্ষিণের পর গার্ড অফ অনার-এর আগে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। দু’হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন। গ্যালারিতেও তখন আবেগের বিস্ফোরণ। কান্নায় ভেঙে পড়েন সুনীলের বাবা, মা এবং স্ত্রী। শেষবারের মতো ভারতের জার্সি গায়ে প্রবেশ করলেন ড্রেসিংরুমে। ম্যাচ সবে শেষ হয়েছে। যুবভারতীর টানেলের সিঁড়িতে বসে পড়লেন। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন সুনীল। চারপাশ দিয়ে লোকজন চলে যাচ্ছে, কিন্তু কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই তাঁর। কিছুক্ষণ নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর পর আবার ফিরলেন মাঠে। গায়ে ভারতের পতাকা জড়ানো। শুরু সংবর্ধনার পালা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হয়ে বিদায়ী সংবর্ধনা জানালেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ডিজাইন করা উনিশটি সোনার কয়েন দিয়ে তৈরি সোনার হার, স্যুট ,শাড়ি এবং উনিশটি গোলাপ দিয়ে বানানো পুষ্পস্তবক তুলে দেওয়া হয় সুনীলের হাতে।
সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ডের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা। সুনীল সহ গোটা পরিবারের হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হয়। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সুনীলের বাবা, মা এবং স্ত্রী সোনম। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এবং আইএফএর পক্ষ থেকেও সুনীলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অয়েল পেন্টিং তুলে দেন সচিব অনির্বাণ দত্ত। ময়দানের তিন ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডানের তরফ থেকেও উত্তরীয় এবং পুষ্পস্তবক তুলে দেওয়া হয়। এককালীন সতীর্থরাও বিদায়ী নায়ককে সংবর্ধিত জানান। ছিলেন মেহতাব, নবি, দীপঙ্কর, অ্যালভিটোরা। এছাড়াও ছিলেন আইএম বিজয়ন। সমাজমাধ্যমে বিদায়ী নায়ককে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, ফোনে সরাসরি সুনীলের সঙ্গে কথাও বলেন মমতা ব্যানার্জি। তাঁকে রাজ্যের ফুটবলের উন্নতিতে কাজে লাগাতে চান মুখ্যমন্ত্রী। এমন একটা উল্লেখযোগ্য দিনে একজনই উধাও। তিনি সুব্রত ভট্টাচার্য। কোথায় ছিলেন সুনীলের তারকা শশুর? পায়জামা পাঞ্জাবি পরে বাড়িতে বসে টিভির পর্দায় দেখলেন জামাইয়ের বিদায়ী ম্যাচ। সুনীলের প্রথম ক্লাব কোচ বলেন, ‘অবসর একদিন সবাইকেই নিতে হয়। এত হা-হুতাশের কিছু নেই।’ তবে একইসঙ্গে সুব্রত ভট্টাচার্য জানিয়ে রাখেন, সুনীল কোচিংয়ে এলে ভারতীয় ফুটবল সমৃদ্ধ হবে। এর আগে অন্য কোনও ফুটবলারের অবসর এত ঘটা করে পালন করা হয়নি। তবে সুনীল যে সবার থেকে আলাদা, শেষবেলায়ও বুঝিয়ে দিলেন। গত ১৯ বছর ধরে পাশে থাকার জন্য, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সাংবাদিকদের চিঠি দিলেন সুনীল ছেত্রী। সত্যিই তিনি অনন্য।