ঢাকার সিদ্দিক বাজারে একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু
পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আহত হয়েছেন শতাধিক।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের ওই ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দিন মনি শর্মা জানান। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট সেখানে উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছে। তবে কীভাবে এ বিস্ফোরণ ঘটল তা জানা যায়নি। ডিএমপির কাউন্টারিজম ইউনিটের বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশও তল্লাশিতে যোগ দিয়েছে।
সাত তলা যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার নিচের দুটো তলায় স্যানিটারি সামগ্রী আর গৃহস্থালী সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। তার উপরে ছিল ক্যাফে কুইন নামের একটি খাবার হোটেল। প্রথম দু’টি তলার ছাদের অংশ ধসে আন্ডারগ্রাউন্ডে পড়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার বলেন, ভবনের নিচে অনেকে আটকা পড়ে আছেন। ভবন কেটে উদ্ধার করতে হবে। সে অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। ভবন ভাঙার ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
বিস্ফোরণে দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ভবনের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা সাভার পরিবহনের একটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্ফোরণের ধাক্কায়।
হাফিজ আকতার বলেন, “অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জীবনহানি অনেক ঘটেছে। সাম্প্রতিককালে এ ধরণের বিস্ফোরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
পাশের সাকি প্লাজা নামের পাঁচ তলা ভবনের ওপরে চারটি ফ্লোরে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলিস্থান শাখা এবং ব্র্যাক ব্যাঙ্কের এসএমই সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় কাচ ভেঙে ব্যাঙ্কের অফিস কক্ষগুলোর পর্দা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
ব্র্যাক ব্যাঙ্কের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ‘‘সিদ্দিক বাজার আমাদের যে শাখাটি রয়েছে, তার পাশের ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেই ধাক্কায় ব্যাংক ভবনের কাচ সম্পূর্ণ গুড়ো গুড়ো হয়ে নিচে পড়েছে। উড়ে আসা কাচের টুকরার আঘাতে কয়েকজন ব্যাঙ্ক কর্মী আহত হয়েছেন।”
সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন কারখানা এবং ঢাকার মিরপুরে রোডে ভবনে বিস্ফোরণের পর এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় বিস্ফোরণে প্রাণহানি ঘটল। সিদ্দিক বাজারে এতবড় বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, “বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে দেখছেন বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা না দুর্ঘটনা। আপনারা জানেন যে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে বলতে পারবেন যে এটি নাশকতা না কোনও দুর্ঘটনা।”
হাসপাতালে আহাজারি :
বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, এ পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী।
আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। আহতদের মধ্যে দগ্ধ সাতজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের সবার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা।
ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইয়ুব হোসেন সন্ধ্যা সোয়া ৯টায় বলেন, “সাতজনের মধ্যে চারজনের শরীরের ৫০ শতাংশের বেশি পুড়েছে। একজনের ৯৮ শতাংশ পুড়ে গেছে।” দেহের ৫৫ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশে আগুনের ক্ষত নিয়েও বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন রোগীরা।
কারও শরীরের ১৫ শতাংশের বেশি আগুনে পুড়ে গেলে চিকিৎসকরা ওই রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হিসেবে বিবেচনা করেন।
ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “তাঁদের প্রত্যেকের অবস্থাই খুব খারাপ।”
ঢাকা মেডিকেলে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন আজিম (১৫), নোমান (৩২), ফাইজু (১৫), আশিক (২৩), কাউছার (৩৭) সিয়াম (৫০), শাকিল (২৩), শহিদুল (৩৪), শাহিন ( ৪২), ফয়সাল (২২), লিটন (২৫), মো. হাসান (৩০), মোস্তফা (৩০) নাজির (৩০), নির্জর (২৮), খলিল (৪০), রুহুল আমিন (৩২), রশিদ (৫৪), শিবলী (৩৫), হাসান ( ২০), তোফাজ্জল (৩০), সজীব (২৪), সুমি ( ১৮), রকেয়া (৫০), রিয়াজ (২০), জাহান (২৫), শাহ আলম ( ৩০), নূর আলম (১৮), জাহান আলী (২০), মজনু (২৮), সেলিনা (৩৬), মোস্তাফিজুর (১১), রাজিব (৪২), ফারদিন (২২), মিলন (২৬), নার্গিস (৩০), হুমায়ুন কবির (৪৮), সুমন (২১), তুষার (১৮), সাইফুল (২০), আলামিন (২৫), শহিদুল (৪৮), মশারফ (৫০), জাহান ( ১৯), আলাউদ্দিন (২৩), সুমন চক্রবর্তী (৪১), তুহিন (১০), আলাউদ্দিন (২০), জয়নাল (৫০), মহাম্মদ ঈসমাইল ( ৪২), সুলাইমান ( ২৪) ও জামাল (৩৬)। এছাড়া আরও অন্তত ছয়জন ভর্তি আছেন, যাঁদের নাম জানা যায়নি।