এবারের বাজেট তো ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতেই বানালাম: অকপট স্বীকারোক্তি মমতার
সম্প্রতি চলতি অর্থবর্ষে বাংলার বাজেট পড়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অসুস্থ থাকায় তাঁর দায়িত্ব পালন করেন মমতা নিজেই। এবার সেই বাজেট তৈরিতে তাঁর ভূমিকাও রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে জানালেন মমতা। একইসঙ্গে বেসরকারি সংবাদ সংস্থার ওই আলোচনাসভায় মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন যে ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতেই এবারের বাজেট বানিয়েছেন তিনি। যা শুনে স্বাভাবিকভাবেই সঞ্চালক থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেরই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ওঠে হাসির রোলও।
বরাবরই জনসভায় সম্পূর্ণ মঞ্চ ব্যবহার করে, এদিক থেকে ওদিক হেঁটে ভাষণ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬৬ বছর বয়সেও তাঁর যে এনার্জি তার পেছনে রয়েছে তাঁর নিয়মিত হাঁটা— এ কথা বরাবারই জানিয়ে এসেছেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার হাঁটেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তার বেশিরভাগটাই তিনি করেন বাড়িতে থাকা একটি ট্রেডমিল ও নবান্নে নিজের দফতরে রাখা আর একটি ট্রেডমিলে। আর সেই ট্রেডমিলে তিনি শুধু হাঁটেনই না, খবরের কাগজও পড়েন, পড়াশোনাও করেন। এবং এবারের বাজেটও ট্রেডমিলেই বানিয়েছেন মমতা। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে এমনই দাবি করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সাম্প্রতিককালের আপনার একটি ভাষণ শুনছিলাম এবং দেখছিলাম। আপনি তো মঞ্চে একবার এদিক, আর একবার ওদিক যাচ্ছিলেন বক্তব্য রাখার সময়। এভাবে কি আপনি শরীরচর্চা করেন?’ উত্তরে মমতা বলেন, ‘আরে কী যে বলে! ওটা শরীরচর্চা নয়, ওভাবে আমি মঞ্চের সামনে থাকা জনগণকে প্রতিটা দিক থেকে সম্বোধন করি।’
এর পরই নিজের আসন থেকে উঠে মঞ্চে কীভাবে হেঁটে হেঁটে তিনি কথা বলেন তা দেখান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘যদি মাঝে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিই তবে আমার চোখ থাকবে শুধুই মাঝখানে। কিন্তু আমি যদি পুরো মঞ্চটা ব্যবহার করে ডানদিক, বাঁদিক যাই তা হলে আমি দু’দিকের লোকজনের দিকে চোখ রেখে তাঁদের উদ্দেশে ভাষণ রাখতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর যদি এতে শরীরচর্চা হয় তা হলে তো ভালই। হতে দিন না।’
মুখ্যমন্ত্রী প্রতিদিন ট্রেডমিলে ১২ কিলোমিটার হাঁটেন। আর তার জন্য ২ ঘণ্টা সময় লাগে। আর ১০–১২ কিলোমিটার পায়ে হাঁটেন মমতা। তিনি বলছিলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ট্রেডমিলে হাঁটি। আর ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতে বিভিন্ন কাজবাজও সেরে নিই। ট্রেডমিলে খবরের কাগজও পড়ি, ফোনে কথা বলি, মেসেজও পাঠাই। কিছু চিন্তাভাবনা করার থাকলে তাও করি ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতে। কিছু পড়াশোনা করার থাকলেও সেটাও করি।’
এর পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন যে তিনি ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতেই এবারের বাজেট বানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেট তো ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতেই বানালাম। মানে ওভাবে বিভিন্ন আইডিয়া মাথায় আসে।’
এ কথা শুনে রীতিমতো অবাক সঞ্চালক থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে। সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, ‘আপনি ট্রেডমিলে বাজেট কীভাবে বানালেন?’ মমতার জবাব, ‘আমি যদি আপনাকে সবকিছু বলেই দিই তা হলে আপনি আমার কাছ থেকে কিছু জানতে চাইবেন না।’ পরে তিনি বলেন, ‘আসলে ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতে বিভিন্ন আইডিয়া আসে মাথায়। বাজেটে কী হবে আর কী হবে না তার অনেকটাই ট্রেডমিলে হাঁটার সময় মাথায় এসেছে। আমি হাঁটলে আমার ব্রেনও আমার সঙ্গে হাঁটে।’