মধুর আবহাওয়ায় এসে গেল এ বছরের দোল-উৎসব।
শীর্ণ শীতের ম্লান পর্বান্তরের পরে যথারীতি এসেছে লাবণ্যময় বসন্তের অম্লান উদযাপন-লগ্ন। আর বসন্তকে উদযাপনের সেরা মুহূর্ত সম্ভবত দোলযাত্রা বা দোলপূর্ণিমা। এ বছর গরম একটু তাড়াতাড়ি পড়ছে হয়তো। বাতাসে রোদ্দুরের তীক্ষ্ণ শাসন। তবে এখনও গভীর রাতের দিকে বা ভোরের দিকে বাতাসে একটা হালতা শিরশিরানি আছে।
এই মধুর আবহাওয়ায় এসে গেল এ বছরের দোল-উৎসব। পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শুক্ল পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব পালিত হয়। এবার দোল পড়েছে ১৮ মার্চ, শুক্রবার। হোলি এর পরদিন ১৯ মার্চ, শনিবার। দোলের আগের দিন ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলায় হোলিকা দহন।
হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতিতে দোল উৎসব বা হোলি উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য। রঙে-রসে ভরা এই বাসন্তিক উৎসবে রয়েছে মানুষে মানুষে মিলনের অপার মাধুর্য। দোলযাত্রার যে ধর্মীয় অনুষঙ্গ তার সঙ্গে সনাতন বৈষ্ণবীয় ভাবধারার গভীর যোগাযোগ। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীচৈতন্যের জন্ম। ফলে গৌড়ীয় বৈষ্ণবীয় ভাবের নিবিড়তা দোলকে ভারতীয় তথা বাঙালির জীবনে এক অন্য অনুভূতিতে সম্পৃক্ত করে তুলেছে বহু দিন আগেই।
আবার এই দিনটির সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণেরও যোগাযোগ স্বীকৃত। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিনে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে আবির খেলায় মেতেছিলেন। দেখতে গেলে সেই ঘটনা থেকেই দোলের দিনে রঙ খেলার উৎপত্তি। দোলযাত্রার দিনে সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহে আবির দেওয়া রীতি।
পরবর্তী সময়ে এই দোল উপলক্ষেই শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবর্তিত বসন্তোৎসব পালিত হয়ে আসছে। নৃত্যগীতের মাধ্যমে এই উৎসব পালিত হয়। রঙে-সুরে-তালে-ছন্দে স্পন্দিত রণিত এই রঙ-যাপন বাঙালিকে অ-ধর্মীয় এক অনুষঙ্গে দীক্ষিত করেছে, যে উৎসবের আসরে বৈষ্ণবীয় অ-বৈষ্ণবীয় সকলেই মিলতে পারেন প্রকৃতির অপার দানকে আত্মস্থ করতে করতে।