গাদিয়াড়া ও গেঁওখালি
গাদিয়াড়া ও গেঁওখালি যেন দুই যমজ বোন। এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করার মতো নাম। মাঝে শুধু নদীর ব্যবধান। এ–পারের গাদিয়াড়া হাওড়া জেলায়, আর ও-পারের গেঁওখালি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। আর কাছেপিঠে দক্ষিণ ২৪ পরগণাও। এ হল ত্রিবেণী সঙ্গম – হুগলি (গঙ্গা), রূপনারায়ণ ও দামোদর। তিন নদী এক হয়ে হুগলি নামে বয়ে গেছে সাগরপানে।
কলকাতার কাছেই হাওড়া জেলায় হুগলি নদীর তীরে বেড়ানোর মনোরম জায়গা গাদিয়াড়া। এখানেই দামোদর মিশেছে হুগলিতে। সেই হুগলিতে নৌকা নিয়ে ভেসে পড়ো। মাঝি নিয়ে যাবে একেবারে কাছে, আরেক সঙ্গমে – হুগলি আর রূপনারায়ণের। মাঝি বুঝিয়ে দেবে তিন নদীর এলাকা আলাদা, আলাদা তাঁদের চেহারা। মাঝি চিনিয়ে দেবে কোন দিকে নুরপুর, কোন দিকে গেঁওখালি আর কোন দিকে গড়চুমুক। মাঝি সতর্ক করবে, ছটফট না করতে, হইহই করে সবাই মিলে নৌকার এক ধারে চলে না যেতে। এতো নদী নয়, সমুদ্রের মতো দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি। তাই বন্দরগামী বা বন্দর ছেড়ে যাওয়া জাহাজ তো দূরের কথা, পাশ দিয়ে লঞ্চ বা ভুটভুটি গেলেও বেশ করে দুলিয়ে দিয়ে যাবে।
গাদিয়াড়ায় দেখে নেওয়া যায় ক্লাইভের প্রাচীন দুর্গ ও লাইটহাউসটি। বাঁধের ধারে পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াতেও ভালো লাগে। গাদিয়াড়া থেকে লঞ্চে নুরপুর হয়ে চলে যাওয়া যায়। সেখান থেকে লঞ্চে গেঁওখালিতে। হুগলি নদীর তীরে আর এক মনোরম পর্যটন কেন্দ্র গেঁওখালি। হাতে একটা-দুটো দিন থাকলে বেড়িয়ে আসা যায় মহিষাদল রাজবাড়ি থেকে। কিংবা আরেকটু দূরের তমলুক থেকে। দেখে আসা যায় রাজবাড়ির ভগ্নাবশেষ আর দর্শন করা যায় মা বর্গভিমাকে। আর গেঁওখালি থেকে একটু বেশি দূরে চলে যেতে চাইলে চলে যাও হলদিয়া।
গাদিয়াড়া ও গেঁওখালি যাওয়ার হরেক পথ। হাওড়া থেকে ট্রেনে বাগনান। সেখান থেকে বাসে গাদিয়াড়া। হাওড়া থেকে সরাসরি বাসেও আসা যায় গাদিয়াড়া। আবার কলকাতা থেকে বাসে নুরপুর পৌঁছে সেখান থেকে লঞ্চে গাদিয়াড়া বা গেঁওখালি যাওয়া যায়। কিংবা হাওড়া থেকে ট্রেনে মেচেদা এসে সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে তমলুক, মহিষাদল হয়ে চলে আসা যায় গেঁওখালিতে। তার পর লঞ্চে নুরপুর, সেখান থেকে গাদিয়াড়া। সহজেই এক দিনে একটা বৃত্তাকার ট্যুর হয়ে যায়—- হাওড়া-গেঁওখালি-নুরপুর-গাদিয়াড়া-হাওড়া।
গাদিয়াড়ায় নদীর পাড়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের রূপনারায়ণ লজ। এ ছাড়াও নানান হোটেল ও লজ রয়েছে এলাকা জুড়ে। গেঁওখালিতে হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ত্রিবেণী সঙ্গম ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স ও সেচ দফতরের বাংলো আছে।”