+91 9330828434 +91 9804424251 banglalivenews@gmail.com

হকির আঁতুড়ঘর হাওড়ার প্রেমনগর

সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী - August 3, 2021 10:01 am - খেলা

হকির আঁতুড়ঘর হাওড়ার প্রেমনগর

চিত্র সৌজন্যে: সত্যজিৎ চক্রবর্তী

“সত্তর মিনিট হ্যায় তুমহারে পাস… সায়দ তুমহারে জিন্দেগিকি সবসে খাস সত্তর মিনিট…”। চাক দে ইন্ডিয়ায় কোচ কবির খান (শাহরুখ খান)-এর ভোকাল টনিকের জোরে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছিল রিল লাইফের খেলোয়াড়রা। আর রিয়েল লাইফে ইচ্ছা ও জেদের ওপর ভর করে আর অধ্যবসায়ের টোটকায় টোকিও অলিম্পিক্স-এ জগৎসভায় শ্রেষ্ঠত্বের দৌড় দিল ভারতের মহিলা হকি ব্রিগেড।

অনেকেরই হয়তো অজানা, আদতে এই হাওড়া জেলাই দীর্ঘদিন ধরে সারা ভারতে জোগান দিয়ে আসছে দুঁদে হকি খেলোয়াড়দের।

বেলেপোল থেকে কয়েক পা এগোলেই ১১/১৩, পুরাতন সায়ার লেন। চলতি নাম প্রেমনগর। এলাকায় পরিচিত হকি বস্তি নামে। রাস্তার মাঝ বরাবর পাতা পাইপের ডিভাইডারের ঢালু অংশটা ডিঙলেই ইট বিছানো কাদামাখা রাস্তা। বৃষ্টি পড়লে সে পথ পেরোতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়। চলার পথে ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো মুরগিছানা, আগাছা খেতে ব্যস্ত ইতস্তত চড়ে বেড়ানো পোষ্য ছাগল, ছাদ ফেটে জল চুঁইয়ে পড়া টালির ঘরের সামনে ডাঁই হয়ে থাকা আবর্জনা। আর সেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হকির স্টিক হাতে ঘুরে বেড়ানো কচিকাঁচার দল। রোজ এখানকার দু’বেলার ছবি। ঝাঁ চকচকে রাজপথ লাগোয়া ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে যখন ঝলমল করছে আলো, পুরাতন সায়ার লেনের কর্দমাক্ত গলিতে তখন আলো-আঁধারিতে দিন গুজরান প্রেমনগরের বাসিন্দাদের।

মূলত আদিবাসী দিনমজুর, ঠিকাশ্রমিক এঁরা। তবে প্রবল আর্থিক সঙ্কটও এঁদের দমিয়ে রাখতে পারেনি নিত্যদিনের হকিচর্চা থেকে। দৈনন্দিনের অনটন বন্ধ করতে পারেনি তাঁদের স্টিক হাতে মাঠে যাওয়া। প্রেমনগরের ঢিলছোঁড়া দূরত্বেই হাওড়ার ধ্যানচাঁদ হকি গ্রাউন্ড। সুযোগ পেলেই এখানকার বাসিন্দারা সেখানে নেমে পড়েন অনুশীলনে।

নেই আর্থিক সামর্থ। জোটেনা খেলার উপযুক্ত পরিকাঠামো। মেলেনা হকির উপযোগী পোশাক, বুট, স্টিক। তবুও প্রতিযোগিতামূলক খেলাতে তাঁদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বেশ ভাল।

দেড় দশক আগের কথা। পিঙ্কি লাকড়া, সঙ্গীতা খাখা, মধুমিতা বাগ, মীনা খাতুন আর উষা বড়া এখানকার এই পাঁচ মেয়ে প্রথম হকি খেলা শুরু করে পুরুষদের দেখাদেখি। এমনকি বাংলা দলের প্রতিনিধিত্ব করে রাজ্যকে চ্যাম্পিয়নও করে এরা। আর তাদের দেখেই উৎসাহ পেয়ে পরবর্তীকালে একে একে হকি খেলতে এগিয়ে আসে সিলভি এক্কা, বিনা বড়া, সুধা এক্কা, নীলিমা কিসপোট্টা, ভেরোনিকা এক্কা, শবনম মিনজরা। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা হকি খেলোয়াড়দেরও উৎসাহ দিতে হাওড়ায় শুরু হয় মিক্সড ইন্টার হকি লিগ। মহিলা খেলোয়াড়দের মানোন্নয়নে উদ্যোগ নেয় হাওড়া হকি ট্রেনিং সেন্টার। ফলস্বরূপ সাফল্য আসে বেটন কাপ, রাজ্য লিগে। শুধু মহিলা ব্রিগেডই নয়, পুরুষদের টিমও হকির বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলায় ধারাবাহিক সাফল্য বজায় রেখে গেছে।

কিন্তু অভিযোগ, স্পনসরারের অভাবে এখানকার অনেকেই এখন ছেড়ে দিচ্ছেন হকি। স্পোর্টস কোটাতেও নাকি সেভাবে ডাক পড়েনা এখানকার হকি খেলোয়াড়দের। অনেকেরই আক্ষেপ, এমনটা চলতে থাকলে আর্থিক অভাবের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে আজীবনের মতো হকি খেলাটাই না ছেড়ে দেয় পুরাতন সায়ার লেনের এইসব প্রতিভাবানরা। তাহলে যে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে হকির সাপ্লাইলাইন।


আরও পড়ুন:

Follow Bangla Live on Facebook

Follow Bangla Live on YouTube