যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান জেলেনস্কির।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর সাফ কথা, ইউক্রেনের নিরাপত্তা গ্যারান্টি ছাড়া কোনও শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতি মানা হবে না। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছিল, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তির বিষয়ে আগ্রহী। সম্প্রতি প্যারিসে ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছে। সেখানেই জেলেনস্কি ট্রাম্পকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শনিবার এলিসি প্রাসাদে জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার আয়োজন করেছিলেন। ট্রাম্প সম্ভবত ইউক্রেনে সহায়তা কমাতে পারেন এমন উদ্বেগের মধ্যে বৈঠকটি হয়েছিল। প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে হামলা চলছে। এর মাঝেই ট্রাম্পের ‘যুদ্ধবিরতি’ আহ্বানের জবাব দিলেন জেলেনস্কি। টেলিগ্রামে একটি পোস্টে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, “মস্কোর সঙ্গে বিরোধ শুধু এক টুকরো কাগজ এবং কয়েকটি স্বাক্ষর দিয়ে শেষ করা যাবে না। যুদ্ধ অবিরাম হওয়া উচিত নয়। তবে, শান্তিচুক্তি স্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য হওয়া উচিত।”
কী বলেছিলেন ট্রাম্প?
রবিবার প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকার শনিবারের বৈঠকের আগে রেকর্ড করা হয়েছিল। সেখানেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, তিন বছর আগে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে ওয়াশিংটন যেভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা করে চলেছে, তাঁর প্রশাসন সেই সহায়তা হ্রাস করবে। এর আগেও ট্রাম্প অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং আলোচনা শুরু করার কথা বলেন। তিনি তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “অনেক জীবন এত অকারণে নষ্ট হচ্ছে, অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। যদি এরকম চলতে থাকে তবে আরও বড় এবং আরও খারাপ কিছুতে পরিণত হতে পারে।” পুতিনের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানান ট্রাম্প।
জেলেনস্কির জবাব?
বৈঠকের পর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট রবিবার জানিয়েছিলেন যে, কিয়েভকে রাশিয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য স্থায়ী শান্তি দরকার। শুরুতে আঞ্চলিক সহায়তা অস্বীকার করলেও বর্তমানে তাঁর সুর কিছুটা নরম। পশ্চিমী সাহায্য হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এমনকি তিনি ন্যাটো নিরাপত্তা গ্যারান্টিও কমছে। এর মাঝেই ট্রাম্পের প্রস্তাব সম্পর্কে জেলেনস্কি বলেন, “আমি বলেছিলাম যে আমাদের একটি ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তি দরকার, যা রাশিয়ানরা অতীতেত মতো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ধ্বংস করবে না। রাশিয়া প্রায় তিন বছরের যুদ্ধে ইউক্রেনকে ধ্বংস করেছে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এবং লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ইউক্রেনীয়রা শান্তি চায়, সঙ্গে নিরাপত্তা গ্যারান্টিও।”
রাশিয়ার অবস্থান
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সায় না দেওয়ায় ক্রেমলিন ইউক্রেন প্রেসিডেন্টকে দায়ী করছে। পুতিনদের দাবি, শান্তি আলোচনায় প্রবেশের জন্য কিয়েভের চারটি অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অপরিবর্তিত রয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “ইউক্রেন আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে।”
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাছাড়া শীতের শুরুতে হামলা জোরালো করেছে মস্কো। সম্প্রতি ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় শহর ক্রিভি রিহতেও হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। স্থানীয় গভর্নর জানিয়েছেন, এ ঘটনায় অন্তত দু’জন নিহত হয়েছেন। ১৬ জন আহতের মধ্যে রয়েছে একজন শিশু-ও। তাছাড়া নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে।