দেবী কালিকার নাম ও রূপ
দেবী কালিকার নাম ও রূপ একটা অদ্ভুত ভয় মেশানো ভক্তির ভাব আনে আমাদের অন্তরে। দেবীর কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে টানটান হয়ে শুয়ে থাকা মহাদেবের বুকের ওপরে দাঁড়ানো বিবসনা এলোকেশী ও মুণ্ডমালিনী কালো বা শ্যামবর্ণের নারীমূর্তি। দেবীর চার হাত। এক হাতে খড়্গ, এক হাতে রক্তঝরা মানুষের মাথা, অন্য দু’হাতের একটি অভয় দান ও অপরটি বরদানের। দেবীর কোমরের চারপাশে কাটা হাতের মালা। দেবীদেহ নানান অলংকারে সুসজ্জিত। হাসি মাখা মুখমণ্ডল।
কালিকার এই মূর্তি যেমন একদিকে ধ্বংস ও অশুভনাশের প্রতীক, তেমনই অন্যদিকে সৃষ্টি ও সৌভাগ্যের দেবীরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে তাঁকে। শবের মতো শায়িত শিব যেন জাগতিক সমস্ত কিছুর ক্ষয় বা পরিসমাপ্তির ইঙ্গিতবহ। মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁর রুদ্র রূপের কথা। একইভাবে তিনি মঙ্গলময় শিবরূপে বিরাজমান, এই বিপরীত রূপ ও ভাবের সমন্বয়ের এক বিস্ময়কর অপূর্ব প্রকাশ দেবী কালিকার মূর্তি।
‘শক্তির রূপ ভারতে ও মধ্য এশিয়ায়’ গ্রন্থে দেবী কালিকা প্রসঙ্গে ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন – ‘কাল’ কথাটির এক অর্থ ‘সময়’ সেই অর্থে কালী সময়ের দেবী।
মহাকাল বা শিব তাঁর স্বামী। সময়ে সবকিছুর ধ্বংস হয়, আবার সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয়। এই মহাজ্ঞানের অধিকারিণী কালের শক্তি সনাতনী কালী। তাই একাদশ শতাব্দীর কালিকা পুরাণে মহামায়া কালীকে ‘বিদ্যা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
তন্ত্রে কালী দশমহাবিদ্যার তালিকায় প্রথম। বিভিন্ন তান্ত্রিক রচনা থেকে জানা যায় যে, তান্ত্রিক মতে তাঁর সাধনা করলে সব কামনা পূর্ণ হয় ও সমৃদ্ধি লাভ করা যায়। শত্রুদের দমন করা যায়, মুক্তিলাভ করা যায়। বৃহদ্ধর্মপুরাণে বলা হয়েছে যে তিনি ‘কেবলা’ (অর্থাৎ কেবল বা সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারিণী) ও ‘শিবা’ (বা পরম মুক্তি’)।
কালীকে বিভিন্ন উদ্দেশে, স্থানে ও রূপ কল্পনায় পূজা করা হয়েছে। কাজেই তাঁর নামের সঙ্গে বিভিন্ন অর্থময় শব্দের ব্যবহার (যেমন শ্মশানকালী, গুহ্যকালী, দক্ষিণাকালী, শ্যামা, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, ডাম্বরকালী, জীবকালী, ইন্দিবর কালিকা, ধনদা কালিকা, রমণী কালিকা, ঈশান কালিকা, সপ্তার্ণ কালী ইত্যাদি) হয়েছে।