কবিতা — লোহার ফটক
*লোহার ফটক
*গীতশ্রী সাহা
————————————
ঐ দূরে দেখা যাচ্ছে শক্ত লোহার ফটকটা
যার দুই হাত কাঁটাতার দিয়ে বাঁধা
যার এপার ওপার জুড়ে শুয়ে আছে একটা শরীর
এই শরীরের মাথা একদিন তার পাকে দেখতে পেত
বুকের ওপর গড়ে ওঠা ব্যবধান যা আর এক হতে দেয় না
ভাগ হয়েছে বহু দিন…….
এপাড়ে থাকা মালতি এখন প্রদীপ জ্বালে মনোহরের উঠানে,
প্রতি সন্ধ্যাবেলায় তুলসি তলায়।
মাঝে মাঝে গুমরে ওঠে বাঁধভাঙা সেই প্রথম যৌবনের স্মৃতি
যখন এই দেহের ভাগ হয়নি, পুরোটাই ছিল এক
তখন সে জব্বারকে একদিন বলেছিল চল না পালিয়ে যাই……..
সমাজকে পেছনে ফেলে, সংস্কারকে ভেঙে বহু দূরে,
জব্বার চুপ ছিল সেদিন।
মালতি কিন্তু সত্যিই বহু দূরে পালিয়েছিল একদিন
পালিয়েছিল গ্রাম ছেড়ে, চেনা রাস্তা ছেড়ে,
চেনা পুকুরের পাড়কে পেছনে ফেলে,
পালিয়েছিল সেদিন যেদিন স্বদেশটা বিদেশ হল।
তল্পিতল্পা গুটিয়ে নিজের ভিটে ছেড়ে অন্য দেশে, নতুন পরিচয় হল…….. রিফিউজি।
সেদিন বুঝি বড় হয়ে উঠেছিল নিজের সত্তাকে রক্ষা করা,
বেঁচে থাকার লড়াই।
ক্যাম্পে থাকাকালীন মন ছুটে যেতে চেয়েছিল সীমান্ত পেরিয়ে………..কতদিন ,
কাঁটাতারের ঘায়ে রক্তাক্ত হয়েছে কতবার
জব্বার আসেনি………..।
এখন চুলে পাক ধরেছে ছোটো পরিবারের সুখি গৃহিণীর।
এখনো ওপারের মতই আজান হয় এপারেও,
সন্ধ্যাবেলায় মন্দিরে বেজে ওঠে শঙ্খ ঘন্টা ধ্বনি,
আজও সে দেখে ভোরের সূর্য; রাতের চাঁদ,
প্রতিদিন চোখে পড়ে কত মানুষ
কিন্তু চোখ পড়ে না সেই মানুষটাকে শরীর ছোঁয় না শরীর
এক দেহের দেশে দাঁড়িয়ে সূর্যদয় আর দেখেনি সে,
সকাল সন্ধ্যায় ওদেশের রহমত চাচার সেই সুর আর কানে ভেসে আসেনি তার।
কত দিন গেছে, মাস গেছে, বছর পেরিয়েছে,
আজও স্মৃতির খাতাটা রয়ে গেছে খালি
মনের কোণটা আজও রয়ে গেছে শূন্য।