কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর দীর্ঘদিনের প্রথা মেনে ভাসানে ‘না’ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর দীর্ঘদিনের প্রথা মেনে ভাসানে ‘না’ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে, প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে কতটা আড়ম্বর করা যাবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের উপরেই ছেড়ে দিল আদালত। গত বছরও কাঁধে করে ঠাকুর বিসর্জন বা সাং-এ প্রতিমা বিসর্জন বাতিল হয়েছিল। এবারও সেই নির্দেশ জারি হয়েছিল। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধেই আবেদন করা হয়েছিল হাইকোর্টে।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কাঁধে করে প্রতিমা বিসর্জনের যে প্রথা দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে, গত বছরের মতো এ বছরও করা যাবে না। কারণ এ বছরও কোভিড বিধি মানতে হবে সর্বত্র। কিন্তু এই প্রথায় প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়। সেই কারণেই এ বছরও প্রতিমা বিসর্জন হবে পুরোপুরি প্রতীকী। খুব অল্প আয়োজনের মধ্যেই সারতে হবে প্রতিমা বিসর্জন। তবে, সেক্ষেত্রেও প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে।
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম আকর্ষণ বিসর্জনের এই শোভাযাত্রা। শহরের বড় বড় পুজোগুলির ঘট বিসর্জন হয় সকালে। আর সন্ধ্যের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় সাঙে করে ঠাকুর বিসর্জনের পর্ব। কৃষ্ণনগর তো বটেই, এমনকী দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা সারারাত জেগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা বসে সেই বিসর্জন দেখেন। ভোর রাতে মেজমা, ছোটমা ও বুড়িমার দর্শন করেই তবে ঘরে ফেরেন সকলে। প্রথা অনুযায়ী, সব পাড়ার ঠাকুর বেহারাদের কাঁধে চেপে আগে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সামনে আসে। তারপর শহরের রাজপথ ধরে জলঙ্গি নদীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
কিন্তু কেন এই রীতি? কথিত আছে, কৃষ্ণনগরের রাজপরিবারের মহিলা সদস্যরা বাড়ির বাইরে প্রতিমা দর্শন করার অনুমতি পেতেন না। কিন্তু তাঁরাও যাতে প্রতিমা দর্শনের সুযোগ পান, সেই কারণেই রাজ পরিবার শুরু করে এক নিয়ম। ঠিক হয়, সমস্ত প্রতিমা আগে রাজবাড়ি প্রদক্ষিণ করবে, তারপর জলঙ্গি নদীতে প্রতিমাগুলির বিসর্জন হবে। রাজবাড়ি ঘোরার সময় মহিলা সদস্যরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই প্রতিমা দর্শন করতেন। আজও সেই নিয়ম আড়ম্বরের সঙ্গে পালন হয়ে আসছে। সেই নিয়মেই ছেদ পড়ে গেল, তাই মেনে নিতে না পেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন আট থেকে আশি সকলেই। এমনকী রীতি মেনে ভাসানের দাবিতে অবরোধও হয়। আর সেই অবরোধে আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই মৃত্যু হয় এক শিশুর।
করোনার সংক্রমণে রাশ টানতে বহু বছরের কৃষ্ণনগরের সেই ঐতিহ্যে ছেদ পড়েছিল গত বছরেই। করোনা অতিমারীর জেরে সর্বসম্মতিক্রমে বন্ধ রাখা হয়েছিল জগদ্ধাত্রী পুজোর ঘট ও প্রতিমা বিসর্জনের সেই সাং প্রথা। কৃষ্ণনগরবাসী এবার আশায় ছিল, এবার হয়ত নিষেধ জারি হবে না। যেভাবে দুর্গাপুজো বা কালীপুজোয় মানুষ আনন্দ করতে পেরেছেন, জগদ্ধাত্রী পুজোর ক্ষেত্রেও তাই হবে। কিন্তু দিন দুয়েক আগে শহরের পুজো কর্মকর্তাদের ডেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, এ বারও সাং প্রথা বন্ধ করতে হবে। এমনকি রাজবাড়ি প্রদক্ষিণের জন্যও কোনও প্রতিমা যাবে না। তার বিরুদ্ধেই আদালতে আবেদন করা হয়। কিন্তু তাতেও ‘না’ করে দিল হাইকোর্ট।