জোড়া গোল করে চলতি আইএসএলে লাল হলুদকে প্রথম জয় এনে দিলেন ক্লেইটন সিলভা।
জিলীয় স্ট্রাইকার। জোড়া গোল করে চলতি আইএসএলে লাল হলুদকে প্রথম জয় এনে দিলেন ক্লেইটন সিলভা। শনিবার যুবভারতীতে হায়দরাবাদ এফসিকে ২-১ গোলে হারাল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের অতিরিক্ত সময় চলছে। দ্বিতীয় ম্যাচেও পয়েন্ট খোয়ানোর হাহুতাশ ইস্টবেঙ্গলের ডাগআউট। চিন্তান্বিত কার্লেস কুয়াদ্রাত। দু’ম্যাচে চার পয়েন্ট হারানোর হতাশা যেন মুখেচোখে ফুটে উঠেছে লাল হলুদের স্প্যানিশ কোচের। ঠিক এমন সময় আরও একবার ইস্টবেঙ্গলের মাসিহা হয়ে উঠলেন ক্লেইটন। গতবছর প্রায়শই তাঁকে যা করতে দেখা গিয়েছে, ঠিক তাই করলেন। দুরন্ত ফ্রিকিক থেকে বিশ্বমানের গোল। দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ের খাতা খুলল ইস্টবেঙ্গল। আইএসএলের ইতিহাসে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম জয় লাল হলুদের। বয়সের ভারে যে ক্লাস মরে না, সেটা আরও একবার প্রমাণ করলেন ব্রাজিলিয়ান। একইসঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন কেন টুর্নামেন্টের সেরা স্ট্রাইকারদের মধ্যে অন্যতম তিনি। পুরো ম্যাচ ফিট না থাকায় আগের ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে ক্লেইটনকে নামান কুয়াদ্রাত। কিন্তু এদিন সিভেরিওর চোখে সংক্রমণ হওয়ায় প্রথম একাদশে স্থান পান। পুরো নব্বই মিনিট মাঠে থাকলে যে তিনি একাই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন, সেটা আরও একবার বুঝতে দিলেন। খেলার শেষে ক্লেইটনকে বুকে টেনে নেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। তাঁর দাক্ষিণ্যে এক গোলে পিছিয়ে পড়েও ২-১ গোলে জয়। ম্যাচের সেরাও তিনি। স্বাভাবিকভাবেই খুশি কোচ। চার আইএসএল মিলিয়ে এটাই সবচেয়ে ভাল শুরু লাল হলুদের। রাত ১০.১০ মিনিটে খেলা শেষ হলেও গ্যালারি তখনও ভরা। প্রিয় দলের প্রথম জয় দেখার অপেক্ষায় ছিল সমর্থকরা। অবশেষে সার্থক। তবে ম্যাচের শুরুটা দেখে মনে হয়নি তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়বে ইস্টবেঙ্গল।
ঘটনাবহুল প্রথমার্ধ। ম্যাচের ৮ মিনিটে এগিয়ে যায় হায়দরাবাদ। নোলেসের পাস থেকে ডান পায়ের শটে বল গোলে ঠেলেন হীতেশ শর্মা। তবে মাত্র দু’মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে সমতা ফেরায় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ১০ মিনিটে ১-১। বক্সের মধ্যে বোরহাকে ফাউল করেন হায়দরাবাদের ডিফেন্ডার। পেনাল্টির দাবি জানায় লাল হলুদ।
রেফারি খেলা বন্ধ করেনি। জটলার মধ্যে থেকে ডান পায়ের শটে গোল ক্লেইটন সিলভার। প্রথমার্ধে দু’দলই আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলে। যার ফলে একাধিক সুযোগ তৈরি হয়। ম্যাচের ১৫ মিনিটে নন্দকুমার বক্সের মুখে পৌঁছে গেলেও বল ধরে রাখতে পারেনি। তার ৬ মিনিট পর আবার সুযোগ এসেছিল। ম্যাচের ২১ মিনিটে মহেশের উদ্দেশে বল বাড়ান ক্লেইটন। কিন্তু ধরতে পারেননি লাল হলুদের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। মিস করেন বোরহাও। ক্রেসপোর শট বাইরে যায়। প্রথমার্ধের খেলায় একটা গতি ছিল। সমতা ফেরানোর পর হায়দরাবাদকে চেপে ধরে লাল হলুদ। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ক্লেইটনের হেড ক্রসপিসের ওপর দিয়ে ভেসে যায়। প্রথমার্ধের শেষ কোয়ার্টারে বেশ কয়েকটা পজিটিভ আক্রমণ ইস্টবেঙ্গলের। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে মন্দরের ক্রস থেকে নিশ্চিত গোল সেভ করেন কাট্টিমানি। কিন্তু এই গোল বাঁচাতে গিয়ে ক্লেইটনের সঙ্গে সংঘর্ষে চোট পান হায়দরাবাদের কিপার। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের হাঁটু লাগে তাঁর মাথায়। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে মাঠ ছাড়েন কাট্টিমানি। পরিবর্ত হিসেবে নামেন অনুজ। বিরতিতে স্কোরলাইন ১-১ ছিল।
শেষ ১০ মিনিট বাদ দিলে, দ্বিতীয়ার্ধ ম্যাড়ম্যাড়ে। বিরতির পর অদ্ভুতভাবে গুটিয়ে যায় দু’দলই। পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ফুটবল হায়দরাবাদের। শেষ ১০ মিনিটের আগে গোল লক্ষ্য করে কোনও শট নেই। আহামরি নয় ইস্টবেঙ্গলও। তবে তুলনায় মন্দ। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে পরিবর্ত ফুটবলার অ্যারেন ডি সিলভাকে বক্সের মুখে ফাউল করেন খাবড়া। কিন্তু কর্ণপাত করেনি রেফারি। একই মুভের কাউন্টার অ্যাটাকে নন্দকুমারকে বক্সের মধ্যে ফাউল করা হয়। কিন্তু খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র একবার পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় ইস্টবেঙ্গল কিপারকে। গোল লক্ষ্য করে নোলসের ডান পায়ের শট বাঁচায় প্রভসুখান গিল। শেষদিকে বেশ কয়েকটা সুযোগ পায় লাল হলুদ। ম্যাচের ৯০ মিনিটে নিশু কুমারের সেন্টার থেকে পরিবর্ত ফুটবলার সিভেরিওয় হেড বাইরে যায়। ৯০+৩ মিনিটে জয়সূচক গোল ক্লেইটনের। বক্সের মুখে ক্রেসপোকে ফাউল করেন টাভোরা। ফ্রিকিক দেন রেফারি। ডান পায়ের দুরন্ত ফ্রিকিকে টপ বক্স ফিনিশ ব্রাজিলীয়র। একেবারে অন্তিম মুহূর্তে সহজ সুযোগ নষ্ট দু’দলেরই। ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গলের কিপারের হাতে বল তুলে দেন অ্যারেন। সিভেরিওর নিশ্চিত গোল ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান হায়দরাবাদের কিপার অনুজ।