+91 9330828434 +91 9804424251 banglalivenews@gmail.com

মহামতি গৌতম বুদ্ধের শান্তির বাণী মানবজাতির কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। 

বিধান চন্দ্র সান্যাল - May 22, 2024 12:56 pm - সাহিত্য

মহামতি গৌতম বুদ্ধের শান্তির বাণী মানবজাতির কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। 

মহামতি গৌতম বুদ্ধের শান্তির বাণী মানবজাতির কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।  তাঁর আদর্শ ত্যাগের মহিমায় দীপ্ত ও মনুষ্যত্বে পরিপূর্ণ।  বুদ্ধের অহিংসা ও জীবনের প্রতি ভালোবাসার বাণী আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

গৌতম বুদ্ধের বাণী, পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।  তিনি বার্তা প্রচার করেছিলেন  তিনি তাঁর কথার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা প্রচার করেছিলেন।  এটি আজকের বিশ্বেও প্রাসঙ্গিক।  এটি বর্তমান, এটি ভবিষ্যত, এটি বর্তমান।  এটি কখনই বিবর্ণ হবে না।  এটি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল সৌন্দর্য ও শান্তির প্রদীপ জ্বালাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বিশ্ব মানবতার কল্যাণ সাধনের জন্য, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং হিংস্রতায় উন্মত্ত নৃশংস শক্তিকে দমন করতে বুদ্ধের শিক্ষা আজকের বিশ্বে একান্ত প্রয়োজন।

লোভ, মোহ, বিদ্বেষ ও লালসা কাটিয়ে গৌতম বুদ্ধ সারা জীবন মানুষের কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও সহানুভূতির বাণী প্রচার করেছেন।  শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটি আদর্শ ও সভ্য সমাজ গড়ে তোলাই ছিল তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বৌদ্ধ ধর্মের দীর্ঘ ইতিহাস অহিংসা, সাম্য ও বন্ধুত্বের ইতিহাস।  সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা এই ধর্মের একটি অপরিহার্য দিক।  বুদ্ধ বলেছেন- শান্তি বাইরে থেকে আসে না, শান্তি আসে মানুষের হৃদয় থেকে।

ভারতীয় দার্শনিক চিন্তার জগতে মহাপুরুষ গৌতম বুদ্ধ নিঃসন্দেহে প্রাচীনকাল থেকেই বিশেষ সম্মানের স্থান দখল করে আছেন।  মানুষ সামাজিক জীব।  সমাজ ছাড়া মানুষ পৃথিবীতে বাঁচতে পারে না।  সমাজ মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

শুধু মানুষ কেন, পশু, পাখি, কীটপতঙ্গেরও সমাজ আছে।  এই কারণেই তথাগত বুদ্ধ মানব সমাজকে সপ্ত অপরিহার্য ধর্মে বলেছেন, ‘অভিনহং সন্নিপাত ভাবিসন্তি’ অর্থাৎ যারা সভা-সমাবেশের মাধ্যমে একত্রিত হয়, তারা সর্বদা শ্রীবক্ষ লাভ করে।  ‘সমগ্গা সন্নিপতন্তি, সমগ্গ বত্থাহন্তি, সমগ্গ করনীয়ানি করোন্তি’—অর্থাৎ, যারা সভা-সমিতিতে একত্রিত হন, সভা শেষ হলে একসঙ্গে চলে যান, এবং যখন কোনো নতুন কাজ আসে, তখন সকলে মিলে তা করেন, সর্বদা উন্নতি, অগ্রগতি, শ্রীভক্তি।  .  থেকে যায় এবং অবক্ষয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।  বুদ্ধ এখানে মিলনের জীবন যাপনের উপর জোর দিয়েছেন।

সংঘ মানে ঐক্য, ঐক্য মানুষের অন্যতম শক্তি।  আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা টিকে থাকতে পারব, বিভক্ত হলে কেউ আমাদের পতন ঠেকাতে পারবে না।  ভগবান বুদ্ধ সর্বদা সংঘকে প্রাধান্য দিয়েছেন।  বুদ্ধ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট জাতির কল্যাণের জন্য আবির্ভূত হননি।  তিনি এই স্থানে আবির্ভূত হয়েছিলেন পৃথিবীর সকল জাতি ও সকল প্রাণীর মুক্তির পথ দেখাতে।

বুদ্ধ মানবজাতির দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য তাঁর ধর্ম প্রচার করেছিলেন।  ছোট-বড় সব প্রাণীর কথাও ভাবতেন।  প্রাণী জীবন মানে দেবতা ও মানুষ, পশু-পাখি, কীটপতঙ্গ থেকে গাছপালা।  সমাজ সকল জীবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তাই সমাজে সংগঠিত হয়ে পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে সৎকর্ম করে আমাদের সাময়িক জীবন অতিবাহিত করতে পারলেই মানব জীবনের উদ্দেশ্য।

বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার প্রভাবে নিত্যনতুন বিলাস দ্রব্যের উদ্ভাবনের ফলে মানুষের তৃষ্ণা দিন দিন বেড়েই চলেছে।  অতৃপ্তি, অতৃপ্তি, লোভ, ঘৃণা, মোহ ইত্যাদি রোগে মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। সেই রোগই আজ সারা বিশ্বে জ্বলছে সহিংসতার আগুনের একমাত্র কারণ।  হায়রে যারা বেশি চায়, তারা আছে ভূরি ভূরি।  খাবার খেলে পশু-পাখির ক্ষুধা মেটে, কিন্তু মানুষের ক্ষুধা মেটে না।  মানুষের ক্ষুধা সর্বভুক।  সারা বিশ্বকে শুষে নিতে পারলেও কিছু বাকী থাকবে।  এই চিরন্তন ক্ষুধা ও সীমাহীন তৃষ্ণার কারণেই মানুষ জীবজগতের সবচেয়ে দুঃখী প্রাণী।  এই দুরারোগ্য তৃষ্ণা-ব্যাধির প্রাদুর্ভাবে ব্যক্তি নিজেও কৃপণ, অন্যের জন্য দুঃখের কারণ হয়।

যুগে যুগে মহাপুরুষেরা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন এমন কঠিন সময়ে মানুষের মধ্যে সদিচ্ছা জাগিয়ে তুলতে।  এই কারণেই মহাপুরুষ গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হন।  মানুষের মধ্যে সুপ্ত সদিচ্ছা জাগ্রত করার সাধনায় তিনি তার সারা জীবন অতিবাহিত করেছেন।  রাজকুমার সিদ্ধার্থ মহারাজা শুদ্ধোধনের গর্ভে রাণী মহামায়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।  যার কারণে মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক গৌরবময় দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।  তিনি মানব প্রেমের বাণী প্রতিষ্ঠা করেছেন, অমর সত্যের পথ প্রকাশ করেছেন।

শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে গভীর সংযম ও নির্জনতা পরিলক্ষিত হয়।  যদিও তিনি বড়ো বিলাসে লালিত-পালিত হয়েছিলেন, দিনের পর দিন দুনিয়ার প্রতি তাঁর বিতৃষ্ণা তাঁর চিন্তাশীলতায় স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।  এমন এক সময়ে, রাজপুত্র হিসেবে একদিন তিনি নগর সফরে বের হয়ে জরাজীর্ণ, রোগাক্রান্ত ও মৃত মৃতদেহ দেখেন এবং মানুষের জীবন যে পরিবর্তনশীল, ক্ষণস্থায়ী ও চিরন্তন দুঃখে পরিপূর্ণ এই গভীর উপলব্ধিতে তার মন যন্ত্রণাদায়ক হয়।  অতঃপর তিনি অতুলনীয় ভোগ ও ধন-সম্পদে মুগ্ধ হয়ে সত্যের সন্ধানে দুঃখী মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেন এবং ছয় বছরের কঠোর সাধনার মাধ্যমে আত্মজ্ঞান লাভ করেন।

সারা ভারতে যখন হাহাকার, হানাহানি, হানাহানি, মারামারি, ঝগড়া চলছে, তখন একদল মানুষ অন্যকে মানুষ মনে করেনি।  শোষণের রথ চলছিল সর্বত্র।  লাখো পশুর রক্তে প্লাবিত হয়েছিল ধানধাম।  আনন্দের উন্মাদনায় নগরন্তীর ধনুকের ধ্বনিতে সুরার ফেনীল উচ্ছ্বাস ভরে উঠল।  সেই অন্ধকার সময়ে যখন ধর্মীয় শাসনের নামে সব ধরনের অন্যায় ও শোষণ শুরু হয়েছিল, অন্ধকারের সমস্ত আবরণ ভেঙ্গে, নেশার সমস্ত প্রলোভনকে অস্বীকার করে, সুখের ঘর, স্ত্রীর ভালবাসা, একজনের স্নেহ।  সন্তানের মায়াবী মুখ, স্নেহময় বাবার ডাক, সেই অন্ধকার সময়ে সমাজের সকল অত্যাচার-নিপীড়নের ভয়কে উপেক্ষা করে একজন চিৎকার করে বলেছিল, সব মানুষ সমান, মানুষে মানুষে বৈষম্যের চেয়ে বড় অন্যায় আর কিছু হতে পারে না।  কে সেই মানুষ?  সেই অন্ধকার সময়ে কে চিৎকার করে বলেছিল, শুধু বৈষম্যই অপরাধ নয়, তার চেয়ে বড় অপরাধ ব্যক্তিগত সম্পত্তির লোভ, এত অশান্তি।  যিনি সে যুগের সমাজতন্ত্রীদের ভ্রুকুটি অস্বীকার করেছিলেন এবং সকল প্রকার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম করেছিলেন।  কে এই মহাপুরুষ?  তিনি আর কেউ নন, মহাপুরুষ গৌতম বুদ্ধ।

যখন ধর্মের নামে শত শত পশুবলি, মানব বলি আর শত শত মনা ঘৃতের অপব্যবহার, লতা-পুজোর ব্যাপক প্রথা ছিল লালসা ও আচার-অনুষ্ঠানে ভরপুর;  তখন আলোর শিশুটি দুহাতে অন্ধকারের সব কালো মেঘ দূর করে বলল, এগুলো ধর্ম নয়, মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অপকর্ম, এর কোনো উন্নতি নেই, অবক্ষয় নেই।  ভাবতে অবাক লাগে, সেই মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে এই মহামানব কীভাবে এত প্রগতিশীল ভাবতে পেরেছিলেন!  যার ডাকে সে যুগের লাখ লাখ মানুষ সর্বস্ব ত্যাগ করে মধ্যপন্থা, সেবা ও সাধনার পথ বেছে নিয়েছিল।  সেদিন তিনি শিখিয়েছিলেন ‘কষ্টে সুখ নেই, ত্যাগে সুখ।  ‘

বিশ্ব শান্তির সহায়ক হিসেবে মহামানব গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত ‘পঞ্চশীল’ নীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাতিসংঘ সংবিধানে পঞ্চশীল নীতি সন্নিবেশিত করেছে এবং বিশ্বকে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।  সে জন্য ‘বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব ও মহাপরিনির্বাণ’-এর ত্রিমুখী স্মরণে পবিত্র বৈশাখী পূর্ণিমাকে ‘বসাখ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হচ্ছে।

তথাগত বুদ্ধ, পঞ্চশীল এবং অহিংসার নীতিগুলি গভীরভাবে বোঝার এখনই সময়।  অচিরেই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।  বুদ্ধ আরো বলেছেন, তোমার একার কোনো শক্তি নেই, ঐক্যবদ্ধ হলেই তোমার শক্তি আছে।  তাই সংগঠিত হও, ভক্তি চিন্তায় আবদ্ধ হবেন না।  কারণ সবার সুখই তোমার আকাঙ্ক্ষা, সবার সচেতনতাই তোমার আদর্শ।  তিনি বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্বজনীন প্রেম ও মানবতার কথাও বলেছেন।  তাই আজ মহান বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে, আমি মহান তথাগত বুদ্ধের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।  এই শুভ দিনে এই বলে প্রার্থনা করুন – ‘হে মহান তথাগত, বিশ্ব আবার হিংসায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে।  আপনার মহান করুণা এবং বন্ধুত্বের এই দুর্যোগের সময়ে সমগ্র বিশ্বে আবারও বর্ষিত হোক।  আপনার শান্তিময় অমৃত হিংসা উন্মাদ মানুষের হৃদয় শান্ত করুক।  ‘


আরও পড়ুন:

Follow Bangla Live on Facebook

Follow Bangla Live on YouTube