প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে প্রশ্নে লিঙ্গসাম্য, প্রতিবাদে দেশের নারী সংগঠন
স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরীকে ধারাবাহিক ভাবে ধর্ষণ করা, ভয় দেখানো ও খুনের হুমকি দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত এক যুবককে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘তুমি যদি মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাও, তবে আমরা সাহায্য করতে পারি। না হলে তোমাকে নিজের চাকরি খোয়াতে হবে, জেলেও যেতে হবে।’’ প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যের কথা জানাজানি হতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নারী আন্দোলনকর্মীরা প্রতিবাদে নামেন। এই মন্তব্য ‘নক্কারজনক’ বলেই মত তাঁদের।
প্রতিবাদীদের বক্তব্য, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ রকম মন্তব্য করলে ভুল বার্তা যায় নিম্ন আদালত, বিচারক, পুলিশ-সহ সকলের কাছেই। এর জেরে মহিলাদের পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক হয়ে উঠবে। কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধেই বিচার পাওয়া আর নারীর সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না বলেই মনে করা হবে। তার চেয়ে বড় কথা, ধর্ষণকারীরা মনে করবে, বিয়ে করলেই পার পেয়ে যাওয়া যাবে। এর জেরে যেমন অপরাধের হার বাড়বে, তেমন মেয়েদের প্রতিবাদ করার জোরও কমবে বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা। নারী আন্দোলনকর্মীদের খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘শ্রীযুক্ত বোবদের প্রস্তাবে আমরা অবাক এবং যার-পর-নাই বিরক্ত। ধর্ষক ও ধর্ষিতার মধ্যে সম্পর্ক নির্যাতনকারী ও নির্যাতিতার। এই বিয়ের প্রস্তাবের মানে হল, তিনি নির্যাতিতা মেয়েটিকে সারা জীবনের জন্য তার অত্যাচারীর সঙ্গে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।’’ রত্নাবলী রায়, দোলন গঙ্গোপাধ্যায়, অনুরাধা কপূর, অঞ্চিতা ঘটকদের মতো এ শহরের বহু নারী আন্দোলনকর্মী স্বাক্ষর করেছেন সেই খোলা চিঠিতে।
একই দিনে আর একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি বোবদে মন্তব্য করেন, কোনও দম্পতি যদি একসঙ্গে থাকেন, তবে সে সময়ে হওয়া যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ বলা চলে না। এতে দু’জনের সম্মতি রয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে। পুরুষসঙ্গী নৃশংস হতে পারেন, তবে তাঁদের মধ্যে হওয়া যৌন সম্পর্ককে আইনত ধর্ষণ বলা চলে না বলেই মন্তব্য করেন বিচারপতি। দেশের অন্যান্য নারী আন্দোলন সংগঠনের মতো, এই শহরের আন্দোলনকারীদের চিঠিও নিন্দা করেছে এই মন্তব্যের। তাতে লেখা হয়েছে, বিচারপতির এই মন্তব্য বিয়ের মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও যৌন অত্যাচারকে শুধু মান্যতা দেয় না, ভারতীয় মেয়েরা বিয়ের মধ্যে যে অত্যাচার সহ্য করতে বাধ্য হন, তাকে স্বাভাবিকত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
গোটা দেশের আন্দোলনকারীদের একটাই বক্তব্য, প্রধান বিচারপতির এমন মন্তব্যে মান্যতা পেয়েছে নারীদের প্রতি অত্যাচার। এতে লিঙ্গসাম্য আরও নষ্ট হতে পারে।