রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিকভাবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসছে
ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিকভাবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসছে। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণায় শামিল হচ্ছে নতুন নতুন দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। সবশেষ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে তাইওয়ান, জাপান। সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার জরুরি বৈঠক শেষ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। রাশিয়ার আর্থিক, জ্বালানি ও পরিবহন খাত লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন তাঁরা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর আগেই গত বুধবার রাতে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার খসড়া তৈরি করে রেখেছিল ইইউ। হামলার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাসেলসে জরুরি বৈঠকে যোগ দেন জোটের নেতারা। বৈঠক শুরুর আগে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, রাশিয়ার আর্থিক খাত, জ্বালানি ও পরিবহন খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বৈতভাবে ব্যবহৃত দ্রব্য, রপ্তানি ও রপ্তানিতে অর্থায়ন নীতি এবং ভিসা নীতিতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে।
খসড়াটির চূড়ান্ত লিখিত রূপটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউর সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অনুমোদন দিলে এবং তা জোটের সাময়িকীতে প্রকাশের পরই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আজ কিংবা কাল শনিবার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন স্থানীয় সময় আজ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছেন। রাশিয়ার অলিগার্ক ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অলিগার্ক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থান মস্কোর জন্য কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এ ছাড়া রুশ পার্লামেন্টের তিন শতাধিক সদস্যের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ আইনপ্রণেতারা ইউক্রেনে রুশ অভিযানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে মরিসন বলেন, বেলারুশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করছে অস্ট্রেলিয়া। বেলারুশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গতকাল রাশিয়ার আট শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল ক্যানবেরা।
নিউজিল্যান্ড
ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে নিউজিল্যান্ড। রুশ সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তাবাহিনীর জন্য পণ্য রপ্তানিও নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। স্থানীয় সময় আজ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এ ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ ওয়েলিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে জেসিন্ডা বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি সদস্য দেশ যখন আন্তর্জাতিক নীতিমালাভিত্তিক শৃঙ্খলাকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে, তখন আমাদের হাতে আর অন্য উপায় নেই।’
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মন্ত্রণালয়গত আলোচনাও স্থগিত করেছে নিউজিল্যান্ড। সংকট নিরসনে আলোচনায় ফেরার জন্য আবারও মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
জাপান
আজ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ইউক্রেনে হামলার জবাবে রাশিয়ার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সামরিক সংস্থা ও ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে তাঁর দেশ।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাপানের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকবে—কিছুসংখ্যক রুশ নাগরিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করা এবং রুশ সামরিক সংস্থাগুলোতে রপ্তানি বন্ধ করা।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে কিশিদা বলেন, ‘জি সেভেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয়ের ভিত্তিতে আমরা আমাদের নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ জোরালো করব।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনে এখনো প্রায় ১২০ জন জাপানি নাগরিক অবস্থান করছেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পোল্যান্ড সরকারের সঙ্গে কথা বলছে ইউক্রেন ও জাপান সরকার।
তাইওয়ান
স্থানীয় সময় আজ তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয়। বলা হয়, নীতিভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার জন্য হুমকি তৈরি করছে মস্কো। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন বন্ধ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব শান্তিপূর্ণ আলোচনা শুরুর জন্য রাশিয়াকে বাধ্য করতে মস্কোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেবে তাইওয়ান।
তবে তাইওয়ান রাশিয়ার বিরুদ্ধে কীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে, তা নিয়ে বিবৃতিতে সুনির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে এ দ্বীপ অঞ্চলটি সেমি কনডাক্টর চিপ তৈরিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে।