সংরক্ষণের ব্যাপারে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
কোটা বিতর্কে এখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ঘাড়ে যাবতীয় দোষ চাপাতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার বিহারে এক সমাবেশে সংরক্ষণের ব্যাপারে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘আম্বেদকর না থাকলে, নেহেরু তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাই করতেন না।’
একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ‘বিরোধী ইন্ডিয়া জোট সংবিধান পরিবর্তন করতে চায়। তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ দিতে চায়।’
আম্বেদকর ও নেহরুর বক্তব্য
বাস্তবে গণপরিষদে বিতর্ক চলাকালীন আম্বেদকর বলেছিলেন যে একটি সম্প্রদায় কতটা ‘অগ্রসর’ হয়েছে, রাজ্যগুলোর সেই পরিস্থিতি নির্ধারণ করা উচিত। আর, ১৯৬১ সালে মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে নেহেরু বলেছিলেন, ‘একটি পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীকে সাহায্য করার একমাত্র উপায় হল সুশিক্ষা।’ শেষে সাংবিধানেক অনুচ্ছেদ ৩৩০ এবং 332 এর অধীনে যথাক্রমে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় SC এবং STদের জন্য সংরক্ষণের প্রবর্তন করেছে।
সংরক্ষণ সম্পর্কে গণপরিষদ
সংবিধান, যখন প্রথম কার্যকর হয়, তখন তফসিলি জাতি ও উপজাতির লোকেদের জন্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের বিধান তাতে ছিল। বর্তমানে সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ রাজ্যগুলোকে অনগ্রসর শ্রেণির নাগরিকদের নিয়োগের অনুমতি দেয়। প্রাথমিকভাবে এই অনুচ্ছেদের আগে নাম ছিল খসড়া সংবিধান ১০। তা নিয়ে গণপরিষদের সদস্যরা ১৯৪৮ সালের ৩০ নভেম্বর বিতর্কে যোগ দেন। বিতর্কে বলা হয়েছিল, ‘অনগ্রসর শ্রেণি’ কী, তা নিয়ে সংবিধানে কোনও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়নি।
সংরক্ষণ বাতিলের দাবিও উঠেছিল
দেশের প্রথম দলিত আইনজীবীদের অন্যতম, কংগ্রেসের চন্দ্রিকা রাম ও উত্তরপ্রদেশের ভবিষ্যতের রাজ্যসভার সদস্য ধরমপ্রকাশ-সহ গণপরিষদের অন্যান্য সদস্যরা তার প্রেক্ষিতে ‘অনগ্রসর শ্রেণি’ শব্দটিকে স্পষ্ট করার পক্ষে সওয়াল করেন। কংগ্রেসের লোকনাথ মিশ্র এবং দামোদর স্বরূপ শেঠের মত প্রতিনিধিরা অবশ্য, ‘অনগ্রসর’ শ্রেণিকে দেওয়া সংরক্ষণগুলো বাতিল করার দাবি জানান। লোকনাথ মিশ্র তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘প্রত্যেকেরই কর্মসংস্থান, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের অধিকার আছে। তবে, কোনও নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রীয় কর্মসংস্থানের একটি অংশ দাবি করা মোটেও মৌলিক অধিকার নয়। এটা, যোগ্যতা অনুসারে হওয়া উচিত। কখনও মৌলিক অধিকার হতে পারে না।’
আম্বেদকর কী বলেছিলেন?
আম্বেদকর বলেছিলেন, ‘অনগ্রসর সম্প্রদায় কী?’ বা অনগ্রসর কারা, সেটা প্রত্যেক স্থানীয় বা রাজ্য সরকার ঠিক করবে। আর নেহরু মুখ্যমন্ত্রীদেরকে লেখা চিঠিতে, পিছিয়ে পড়াদের তুলে ধরার কথা বলেছিলেন। কিন্তু, কখনও জাতি এবং ধর্মের ভিত্তিতে শিক্ষা এবং চাকরিতে সংরক্ষণের কথা বলেননি। শেষে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৩০ এবং ৩৩২-এর অধীনে লোকসভা এবং বিধানসভায় তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণ চালু করা হয়।