সময়ের চরিত্র বদলালে, গল্পের হিরোর তো বদলাতেই হয়। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং পরিচালক অরিন্দম শীল নিশ্চয়ই এমনটাই বিশ্বাস করেন। তাই তো ‘তীরন্দাজ শবর’ -এর শবর এমন মানবিক। এমনিতেই বাংলা ছবিতে এখন গোয়েন্দারাজ। ফেলুদা, ব্যোমকেশ , একেন বাবু , কাকে ছেড়ে কার কাছে যাবেন দর্শক। দ্বিধা দ্বন্দ্ব খানিকটা মিটিয়ে দিয়েছেন শবর দাশগুপ্ত নিজেই। তিনি প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর নন, সত্যান্বেষীও নন, বরং উর্দীধারী পুলিশ। তাও আবার লাল বাজারের। ভাবছেন, থ্রিলার কোশেন্ট কিছু কম হবে তাতে? ভুল ভাবছেন। এ ছবি তে সাসপেন্স, খুন, রহস্য, রোমাঞ্চ সবই আছে, আবার আছে এক অন্য শবরের পরিচয়। শনিবার হাওড়ার অবনী রিভারসাইড মল এ হয়ে গেলো ছবির প্রমোশন ।
একটি খুনের মূল অভিযুক্তকে (নাইজেল আকারা) হেফাজতে না রেখে ছেড়ে দিলেন শবর। কেন? তা বলা যাবে না। তবে সেখানেই সাস্পেন্সের শুরু। এরপর টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে এগোয় গল্প। ছবিতে শবর আর নন্দর মুচমুচে রসায়ন খুবই উপভোগ্য। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার, এ ছবি যতটাই শবরের, ততটাই বুলুদার, ততটাই রুমকির। সবার জুতোয় পা গলালেই মনে হবে এটা আসলে তার-ই গল্প। তীরন্দাজ শবরে নাইজেল আকারা অনবদ্য। দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার যথাযথ। আলাদা করে বলতে হয় চন্দন সেনেরচরিত্রটির কথাও। এ গল্প আসলে তারও। শবরের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় নিয়ে কিছু বলাটা ধৃষ্টতা। তবে অরিন্দম শীলের অন্যান্য ছবির তুলনায় এ ছবির সঙ্গীত একটু দুর্বল লেগেছে, তেমন মন ছোঁয় নি। আর নিম্নবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে ইকোনমিক্সে এমএসসি পাশটা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু ট্যাক্সি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে বুলুদার এস্থার ডুফলো-অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় পড়াটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?
তবে ছবির আসল মুন্সিয়ানা ছবির গল্প বলার ঢং-এ। দর্শক এক সময় ভুলে যাবেন নিছক গোয়েন্দা গল্প দেখছিলেন। অথচ এক মুহূর্তের জন্যেও মনে হবে না জোর করে বিবেকের বাণী আরোপ করা হচ্ছে চরিত্রদের মুখে।
জেতা-হারা-অপরাধ-অপরাধী এসবের সংজ্ঞা আসলে কী? ছবির শেষদিকটা কেমন ঘোরের মতো মনে হয়। সাদা-কালোর বাইরে যে দুনিয়াটা আছে, তাকে আবার নতুন করে দেখতে ইচ্ছে হয়।
বুলুদা, রুমকি-কে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিল, নিজের জীবন বাজি রেখে। এই রুক্ষ সময় যখন কেউ কাউকে সুযোগ দেয় না, বরং কেঁড়ে নেয়, সেখানে দাঁড়িয়ে একটা বুলু দা-র অপেক্ষায় আমরা সবাই। আর শবর? দুর্ভাগা সেই দেশ যে দেশে কোনও শবর নেই।