বিজেপিতে যোগদান করেই ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ স্লোগান তুললেন শুভেন্দু
দলবদল করেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে জেতানোর আহ্বান জানালেন শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার মেদিনীপুর কলেজ ময়দানের সভা থেকে একের পর এক আক্রমণ শানালেন পুরনো দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তুললেন, ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ স্লোগানও।
এদিন শুরুতেই অমিত শাহকে নিজের ‘বড় দাদা’ বলে সম্মোধন করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘যে পার্টি জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম ও বহুত্ববাদে বিশ্বাস করে, যে পার্টি গীতার বাণী, বহুজনহিতায়, বহুজনসুখায়, বসুধৈবকুটুম্বকম সেই নীতিকে বিশ্বাস করে, সেই ভারতীয় জনতা পার্টিতে যিনি আমাকে প্রাথমিক সদস্য হিসাবে গ্রহণ করলেন, আমার বড় ভাই, আমার দাদা, দেশের আন – বান – শান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহজিকে। ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নির্বাচনে জিতে যাযা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৮ মাসের মধ্যে তা পূরণ করেছেন তিনি’।
অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ স্মরণ করে বলেন, ‘তিনি তখন পার্টির অল ইন্ডিয়া জেনারেল সেক্রেটারি। পূর্ব উত্তর প্রদেশের দায়িত্বে থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলকে জিতিয়েছেন। উত্তর প্রদেশে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন, তখন অশোক রোডের পুরনো পার্টি অফিসের সামনে একটা ছোট্ট ঘরে অমিতজি আমাকে দর্শন দিয়েছিলেন। আর সেই দর্শনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন এখন উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিনহা। তিনি আমাকে কোনওদিন বিজেপিতে যোগ দিতে বলেননি’।
এর পরই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘আমি যখন করোনায় আক্রান্ত হই তখন ২১ বছর যে দলের জন্য করেছি তার কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। ২ বার খোঁজ নিয়েছেন অমিত শাহজি’।
মুকুল রায়কে কৃতজ্ঞতা জনিয়ে বলেন, ‘মুকুল রায় আমাকে সবসময় উৎসাহিত করেছে। বলেছেন, শুভেন্দু, আত্মসম্মান বোধ যদি তোর থাকে তুই তৃণমূলে থাকবি না। তুই চলে আয়। আমরা আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো। ‘
স্থানীয় বিজেপি নেতাদের নাম করে তিনি বলেন, ‘আশ্বস্ত করছি শুভেন্দু মাতব্বরি করতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসেনি। শুভেন্দু আপনাদের ওপরে খবরদারি করবে না। শুভেন্দু কর্মী হিসাবে পার্টির নির্দেশ পালন করবে। পতাকা লাগাতে বলতে লাগাবো, দেওয়াল লিখন করতে বললে করবো’।
এর পরই তৃণমূলকে আক্রমণ করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে? যারা বলছে তারা ১৯৯৮ সালে তৃণমূল প্রতিষ্ঠার পর অটলজির আশীর্বাদ না পেলে বাড়ি থেকে বেরোতে পারত না। ৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট করে ৯টি আসন জিতেছিল তৃণমূল’।
তৃণমূলের পরাজয় নিশ্চিত বলে দাবি করে শুভেন্দু বলেন, ‘এই মাঠে কয়েকদিন আগে নেত্রী বলেছেন, দল গঠনের পর কাঁথিতে লড়েছিলাম। দ্বিতীয় হয়েছিলাম। বোঝাতে চেয়েছেন অধিকারীদের বাদ দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। আপনি এবারও দ্বিতীয় হবেন। প্রথম হতে পারবেন না। প্রথম হবে ভারতীয় জনতা পার্টি। সরকার তৈরি করবে’।
বিজেপির পুরনো কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমণেও মুখ খোলেন শুভেন্দু। বলেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির ১৩৫ জনের আত্মবলিদানে কষ্ট হয়। অনেক কাজ হয়তো আমরা সমর্থন করিনি। যেখানে আস্থা নেই, যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে থাকবো না। এটাই আমাদের মেদিনীপুরের গৌরব’।
তৃণমূলের নেতাদের জবাব দিয়ে বলেন, ‘বলছে মায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যিনি জন্মদায়িনী। যিনি জন্ম দিয়েছেন মা। আমার মায়ের নাম গায়ত্রী অধিকারী। আর যদি মা কাউকে বলতে হয়, ভারতমাতাকে মা বলবো। অন্য কাউকে মা বলতে পারবো না’।
তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন শুভেন্দু। তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলেরও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচিগুলোকে রাজ্যে চালু না করা, চালু করলেও নাম পালটে দেওয়া। কৃষ্টি সংস্কৃতির এই বাংলায় অমিত শাহকে বহিরাগত বলছে? আমরা আগে ভারতীয়, তার পর বাঙালি, এই বহুত্ববাদ আমরা নষ্ট করতে দেবো না’।
রাজ্যে বিজেপির সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে চাই কলকাতা ও দিল্লিতে একই দলের সরকার থাকুক। নইলে বাংলা বাঁচবে না। অর্থনীতি শেষ হয়ে গেছে। বেকারদের চাকরি নেই। চার হাজার টাকা, ২ হাজার টাকার চাকরি। SSC-র নিয়োগ নেই। TET-এর দুর্নীতি। এটা থেকে যদি বেরিয়ে আসতে হয় যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে বাংলাকে তুলে দিতেই হবে। এই কাজটা করার জন্য আমি কাল থেকেই লেগে পড়বো’।
ভাষণের একেবারে শেষে শুভেন্দু স্লোগান তোলেন, ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’।
এদিনের সভায় শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপিতে যোগদান করেছেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল। সঙ্গে যোগদান করেছেন ৯ জন বিধায়ক। তার মধ্যে ৬ জন বিধায়ক তৃণমূলের, ২ জন বাম ও ১ জন কংগ্রেসের।