করোনায় শতকরা ৮০ ভাগ মৃত্যু কমায় উকুনের ওষুধ
মাথার উকুন মারার একটি সস্তা ওষুধ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যু শতকরা ৮০ ভাগ কমিয়ে আনতে পারে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এই ওষুধটির নাম আইভারমেকটিন। এর একটি ডোজের দাম মাত্র এক পাউন্ড। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি হতে পারে একটি শক্তিশালী অস্ত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ণাঙ্গ কোর্সে এই ওষুধটির পিছনে খরচ পড়তে পারে এক থেকে ২ ডলার। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এন্টিভাইরাল ওষুধ হিসেবে এটি হতে পারে প্রতিশ্রুতিশীল একটি চিকিৎসা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য টাইমস।
এতে আরো বলা হয়েছে, এটি একটি এন্টিপ্যারাসাইট বা পরজীবী বিরোধী ওষুধ। মাথার উকুন এবং চুলকানি/পাচড়ার চিকিৎসায় সাধারণত এটি ব্যবহার করা হয়।
এই ওষুধটি ত্বকের ওপরে ব্যবহার করতে হয়। বিশেষ করে ত্বকের যে স্থানে সংক্রমণ ঘটেছে সেখানে লাগালে এ থেকে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে। এই ওষুধটি মূল্যায়ন করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে কমিশন গঠন করা হয়। তাতে লিভারপুল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অ্যানড্রু হিল দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর পরীক্ষায় রোগীদের ওপর একের পর এক আইভারমেকটিন প্রয়োগ করা হয়েছে। তারা কমপক্ষে ১০০০ রোগীর ওপর ১১ বার এই পরীক্ষা চালিয়েছেন। বেশির ভাগ পরীক্ষা করা হয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে। এতে সাধারণ সময়ের অর্ধেক সময়ে আক্রান্ত রোগীরা করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষ সুস্থ হয়েছেন দু’সপ্তাহের মধ্যে। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ডাটা থেকে দেখা গেছে, যেসব রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় তাদের তুলনায় এই ওষুধটি শতকরা ৮০ ভাগ মৃত্যু কমায়।
পরীক্ষার বিশ্লেষণ এই মাসের শেষের দিকে প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। ড. হিল বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করোনা ভাইরোসের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় আইভারমেকটিন হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যেহেতু অনেক দেশেই দ্বিতীয় ঢেউ বা সংক্রমণ শুরু হয়েছে তাই এই ওষুধটি হতে পারে আকর্ষণীয়। কারণ, পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা কোর্সে খরচ হবে এক থেকে ২ ডলার। বিশ্বজুড়ে এটি ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদি আরো পরীক্ষায় সফলতা দেখা যায়, তাহলে এটা হতে পারে একটি পরিবর্তনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি। গবেষকরা বলছেন, সস্তায় পাওয়া উকুনের এই ওষুধটি করোনা ভাইরাসের জীবনচক্রে হস্তক্ষেপ করে তার বিস্তার কমিয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি হতে পারে একটি প্রদাহ বিরোধী চিকিৎসা। করোনা ভাইরাস মহামারির শুরুতে এমন প্রদাহ বিরোধী অনেক ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং টোসিলিজুমানের মতো ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। ডেক্সামেথাসন ভাইরোসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।
তবে মাথার উকুনের এই ওষুধকে যখন কিছু বিশেষজ্ঞ প্রতিশ্রুতিশীল বলছেন, তখন অন্যরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পিটার হারবি বলেছেন, এখনও মাথার উকুনের এই ওষুধটির কার্যকারিতা ‘পিয়ার’রা রিভিউ করেননি। দ্য টাইমসকে তিনি বলেন, যে ডাটা দেয়া হয়েছে তা আগ্রহোদ্দীপক। সম্ভবত উৎসাহ সৃষ্টিকারী। এখনও এ ওষুধ নিয়ে আশ্বস্ত হওয়া যায়নি।