+91 9330828434 +91 9804424251 banglalivenews@gmail.com

অর্থনীতিতে ভয়াবহ ধস, ৪০ বছরে প্রথম

নিজস্ব সংবাদদাতা - September 12, 2020 11:04 pm - দেশ

অর্থনীতিতে ভয়াবহ ধস, ৪০ বছরে প্রথম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ধস নেমে এসেছে ভারতে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল-জুনে দেশের অর্থনীতি নজিরবিহীনভাবে ২৩.৯% সংকুচিত হয়েছে, যা গত চল্লিশ বছরে দেখা যায়নি।

বস্তুত অর্থনীতির এতটা গভীর সংকোচন স্বাধীনতার পর আর কখনো হয়নি। এরপর জুলাই-সেপ্টেম্বরেও যদি অর্থনীতির সংকোচন অব্যাহত থাকে, যার সম্ভাবনাও খুব বেশি, তা হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।

রেটিং সংস্থা ক্রিসিলের আশঙ্কা, স্বাধীনতার পর এই নিয়ে চতুর্থবার মন্দার সম্মুখীন ভারত এবং এই মন্দা হয়তো সবচেয়ে তীব্র হবে। সংস্থাটি মনে করে, পরের প্রান্তিকগুলোতে অর্থনীতি যদি খানিকটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তা হলেও পুরো অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতি ৫% সংকুচিত হতে পারে।

গত ২৫ মার্চ থেকে দেশজোড়া লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যায়। ১ জুন থেকে ধীরে ধীরে লকডাউন ওঠা শুরু হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানায় উৎপাদন, কর্মসংস্থান তৈরিতে তেমন গতি আসেনি।

ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, “গত ১২ মাসে দেশের জিডিপি-র চার ভাগের এক ভাগ মুছে গেছে। অন্যভাবে বলতে গেলে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের শেষ থেকে জিডিপি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।”

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আগেই বলে রেখেছিলেন, কোভিডের মতো ‘দৈবদুর্বিপাক’-এ অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে। সোমবার মোদী সরকারের শীর্ষমহলের ব্যাখ্যা, লকডাউনের জেরে যেহেতু অধিকাংশ কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল, তাই এই সঙ্কোচন প্রত্যাশিত। আমেরিকা, জাপান বা ব্রিটেনে সঙ্কোচনের হার এর থেকেও বেশি।

কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এই তিন মাসে নতুন লগ্নি ৪৭% কমেছে, যা ইতিহাসে এই প্রথম।

অর্থ মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছে, ‘আনলক’ পর্ব শুরু হওয়ার পরে দ্রুত গতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সোমবারই দেখা গেছে, জুলাই মাসেও আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সঙ্কোচন হয়েছে। এই নিয়ে টানা পাঁচ মাস পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সঙ্কোচন চলছে। জুলাইয়ে পরিকাঠামো শিল্পে ৯.৬% উৎপাদন কমেছে। ইস্পাত, সিমেন্ট উৎপাদন কমেছে। ফলে অন্য ক্ষেত্রেও যে উৎপাদন কমছে, তা স্পষ্ট।

লকডাউন পর্বে একমাত্র খাদ্যপণ্য ও ওষুধ ছাড়া বাকি সবেরই উৎপাদন বন্ধ ছিল। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিসংখ্যান মন্ত্রক জানিয়েছে, এপ্রিল-জুনে কৃষি ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সঙ্কোচন হয়েছে। গোটা বর্ষার মরসুমে বৃষ্টি ও ভাল ভাবে বীজ বোনার ফলে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৩.৪%।

মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যন যুক্তি দিয়েছেন, এপ্রিল থেকে জুন, শুধু দেশের নয়, বিশ্বের অর্থনীতিই লকডাউনে ছিল। কিন্তু আনলক পর্ব শুরু হতেই সঙ্কোচনের মাত্রা কমতে শুরু করেছে। যে ভাবে দ্রুত গতিতে অর্থনীতি পড়েছে, তেমনই দ্রুত গতিতে অর্থনীতির পুনরুত্থান দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের মতে, “বিপদ এখনও কাটেনি। জুলাই ও অগস্টে অর্থনীতির মাপকাঠি দেখে বোঝা যাচ্ছে, জুলাই-সেপ্টেম্বরেও জিডিপি ১২ থেকে ১৫% কমবে।”

আর্থিক মূল্যায়ন সংস্থা আইসিআরএ-র মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের মতে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিক, অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত জিডিপি-র সঙ্কোচন অব্যাহত থাকবে। তবে সঙ্কোচনের মাত্রা কমতে পারে। লকডাউনের আগে থেকেই অবশ্য অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করেছিল। গত অর্থ বছরের শেষ তিন মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চে বৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশে নেমে আসে। ১৭ বছরে বৃদ্ধির হার এত কমেনি। গত অর্থ বছর বা ২০১৯-২০-তেও বৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশে নেমে এসেছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের ব্যাখ্যা, সরকারি পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, বর্ষার মৌসুম ভাল না হলে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে খাদ্য সুরক্ষা, জনস্বাস্থ্য, একশো দিনের কাজ, নগদ ভর্তুকিতে টাকা না ঢাললে অর্থনীতির সঙ্কোচন আরও বেশি হত। তিন মাসে সরকারি খরচ বেড়েছে প্রায় ১৬% বেড়েছে। কিন্তু ধাক্কা লেগেছে ভারতের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হল দেশের বাজার বা কেনাকাটায়। সেখানে সঙ্কোচন ২৭%। কিন্তু সরকারি খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতি সচল রাখতে হলেও লকডাউনের ধাক্কায় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। সরকারি কোষাগারের তথ্য হল, এপ্রিল থেকে জুলাই, চার মাসে রাজকোষ ঘাটতি গোটা বছরের রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য ছাপিয়ে গেছে।

উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চের শেষে লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল। সেই মার্চে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৭৫%। ৩০ অগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহেও বেকারত্বের হার ৮ শতাংশের ওপরেই। সূত্র: ইন্টারনেট


আরও পড়ুন:

Follow Bangla Live on Facebook

Follow Bangla Live on YouTube