এবার পুজোয় তাঁতের শাড়ি মিলবে কম
করোনার জন্য কোয়েম্বাটুর এবং মুম্বই থেকে সুতো আসা বন্ধ। তাই পুজোয় তাঁতের শাড়ি তৈরিতে বিস্তর সমস্যায় শিল্পীরা। রাষ্ট্রপতি পদক পাওয়া ফুলিয়ার প্রখ্যাত তাঁতশিল্পী বীরেনকুমার বসাক বললেন, ‘করোনা সংক্রমণের ফলে এবার পুজোয় শেষ পর্যন্ত শাড়ি বড় বড় দোকানে পৌঁছতে পারব কিনা, সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অন্যান্য বার পুজোর তিন মাস আগে থেকে বড় বড় দোকান মালিক ফুলিয়া থেকে তাঁতের শাড়ি নিয়ে যেতেন। এখন মানুষের হাতে পয়সা নেই। তাই তাঁতশিল্পীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, বস্ত্রমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, সাংসদ মহুয়া মৈত্র আমাদের পাশে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তন্তুজ আমার কাছে সাড়ে তিন লক্ষ শাড়ির বরাত দিয়েছে। যেটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর নিয়ে নেবে। বিভিন্ন দামের শাড়ি আমাদের এখানে রয়েছে। সমাজের সব স্তরের মানুষ সেই শাড়ি কিনতে পারবেন।’
ফুলিয়া এবং শান্তিপুর মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষ তাঁতশিল্পী আছেন। সেখানে তৈরি হয় জামদানি, টাঙ্গাইল, সিল্ক, তসর, মটকা, মুগা শাড়ি। বীরেনবাবু বলেন, ‘আমাদের কাছে ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দামের শাড়ি পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের নকশা সেখানে রয়েছে। শাড়িতে রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া।’ শুক্রবার পর্যন্ত তাঁরা শাড়ির দামে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছিলেন। সেই ছাড় ফের কবে পাওয়া যাবে? তিনি জানান, এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকারের দেওয়া উইভার্স কার্ড এখনও অনেক পাননি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কয়েকদিন আগে ফোন করে তাঁর খোঁজখবর নিয়েছেন। বীরেনবাবু একটি হিসেব দিয়ে বলেন, ‘একজন তাঁতশিল্পী দিনে সাধারণ মানের আটটি শাড়ি বুনতে পারেন। একটি শাড়ির জন্য মজুরি হিসেবে পান ৮০ টাকা। এক একটি পরিবারের একাধিক সদস্য এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। রোজগার ভাল হয়। তবে করোনার জন্য সমস্যা হচ্ছে। কারণ সুতো আসছে না, উৎপাদন কমেছে। চাহিদাও কমেছে।’
বীরেনবাবু মসলিনের ওপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি করেছেন। পরিস্থিত স্বাভাবিক হলে সে দেশে গিয়ে তিনি সেই শাড়ি তুলে দেবেন। এর আগে তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রতিকৃতিও ফুটিয়ে তুলেছিলেন মসলিনের ওপর। তাঁর উপহার পেয়ে তারিফ করেছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। মসলিনের কাপড়ে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই শিল্পীর বাড়ি ফুলিয়ার চটকাতলায়। বীরেনবাবু বলেন, ‘আমি ও ভাই মাথায় করে শাড়ি ফেরি করতাম। দক্ষিণ কলকাতায় একটি দোকানে জিনিস দিতে গিয়ে দেখি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এবং তাঁর স্ত্রী মায়া রায় দাঁড়িয়ে আছেন। শাড়িগুলি দেখে খুব পছন্দ হয় তাঁদের। তাঁরা আমাকে বেলতলার বাড়িতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। মায়া দেবীর উদ্যোগে দিল্লিতে একটি প্রদর্শনীও হয়েছিল। তখন আমাদের হাতের কাজ দেখে সাড়া পড়ে যায়।’