এবারের হজে একেবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা
এবারের হজে একেবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা
এবছর যারা হজ করার সুযোগ পেয়েছেন, তাকে লটারি জেতার সঙ্গেই তুলনা করা যেতে পারে। এই হজে যাওয়া হোল সারাজীবনের স্বপ্ন।
স্মরণকালের ইতিহাসে এবারের মতো এত কম মানুষ আর হজ করেনি। আর সেবছরই হজে যাওয়ার সুযোগ এক বিরল সৌভাগ্যই বলতে হবে।
হজের প্রথম দিনে বেশিরভাগ মানুষই তাদের স্মার্টফোন উপরে ধরে সেলফি তুলছিলেন, পরিবার আর বন্ধুদের জন্য হজের আনুষ্ঠানিকতা লাইভ স্ট্রিম করছিলেন।
মাত্র গত বছরই মক্কায় সুপার-হাইস্পিড ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করা হয়। ফলে স্মার্টফোন থেকে এগুলো এখন করা যাচ্ছে খুবই সহজে।
গত বছর হজে অংশ নিয়েছিল ২৫ লাখের বেশি মুসলিম। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আর সব কিছুর মতো বিশ্বের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় এই সমাবেশের ক্ষেত্রেও সৌদি কর্তৃপক্ষকে জারি করতে হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ।
এবছর হজে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা সীমিত করে দেয়া হয়েছে কয়েক হাজারে। শুরুতে সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছিল, মাত্র এক হাজার মানুষকে হজ করতে দেয়া হবে। এখন অবশ্য সৌদি গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, দশ হাজার মানুষ হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা
হজের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেয়ার সময় মুসলিমদের মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়, দিনে কয়েক ঘন্টা করে প্রার্থনা করতে হয়। বাইরে খোলা জায়গায় রাত্রি যাপন করতে হয়।
প্রতি বছর যখন লাখ লাখ মুসলিম এসব আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন, তখন মক্কা এবং মদিনাকে ঘিরে চারপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মানুষের ভিড়ে পদদলিত হয়ে বহু মানুষ মারা গেছেন এর আগে হজ করার সময়। কিন্তু এবারের হজযাত্রীরা একেবারেই এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা বলছেন।
সৌদি নার্স ওয়াজদান আলি বলেন, “এবার মানুষের ভিড় নেই, তাই আমি আমার সব আনুষ্ঠানিকতা সহজে পালন করতে পারছি। এবারের পরিবেশটা তাই খুব শান্ত-সমাহিত, অনেক বেশি আধ্যাত্মিক পরিবেশ।”
এবার প্রত্যেক হজযাত্রীর হাতে পরিয়ে দেয়া হয়েছে একটি রিস্টব্যান্ড, যাতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সারাক্ষণ জানতে পারেন তার অবস্থান। কোয়ারেনটিনে থাকে মানুষদের ওপর নজরদারির জন্য এই ব্যবস্থা। এটা একটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
প্রতিটি হজযাত্রীকে সৌদি কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করেছে। তাদের মুখোশ পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং পরস্পর থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। যে পাঁচদিন ধরে হজের আনুষ্ঠানিকতা চলবে, সে কদিন তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে নিয়মিত।
এবছর হজে অংশগ্রহণকারীরা জানান, সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের যে ইহরাম দিয়েছেন (হজে অংশ নেয়ার সময় সেলাই ছাড়া যে সাদা কাপড় পরতে হয়), সেটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী কাপড় দিয়ে তৈরি।
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, এখন পর্যন্ত হজের আনুষ্ঠানিকতা ভালোভাবেই আগাচ্ছে। হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোন উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যায়নি, করোনাভাইরাস সংক্রমণের একটি ঘটনাও ধরা পড়েনি।
হজযাত্রীরা আজ আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে “শয়তানের দিকে পাথর ছোঁড়ার’ যে রীতিটিতে অংশগ্রহণ করেন, সেই পাথরগুলোও ছিল স্যানিটাইজড।
তীব্র রোদের মধ্যে তারা যখন মিনা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, তখন তাদের ওপর সতর্ক নজর রাখছিল নিরাপত্তা রক্ষীরা। হজযাত্রীদের মুখে মাস্ক, পরণে হজের সাদা কাপড়।