+91 9330828434 +91 9804424251 banglalivenews@gmail.com

প্রয়াত ভারতরত্ন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা - September 1, 2020 12:20 am - দেশ

প্রয়াত ভারতরত্ন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়

প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। দিল্লির বাসভবনে পড়ে মাথায় চোট পান তিনি। যার জেরে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধে। অস্ত্রোপচার প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের আগে জানা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত। তার পরও অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেন দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। কিন্তু ক্রমশই তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন তিনি।

১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের বীরভূম জেলার মিরাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বাবা কামদাকিঙ্কর ছিলেন সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্য হন তিনি। শিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। এর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন পাশ করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে কলকাতায় ডাক বিভাগের কারণিক পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৬৩ সালে বিদ্যাসাগর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ‘দেশের ডাক’ নামে একটি সংবাদপত্রে কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছিলেন তিনি।

রাজনীতিতে প্রণববাবুর উত্থান হয়েছিল ১৯৬৯ সালে মেদিনীপুর উপ-নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর নজরে পড়েন তিনি। প্রণববাবুকে দলে যোগদান করান ইন্দিরা। সেই বছরই রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। এর পরও ৪ বার রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন তিনি।

সংসদীয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েই ইন্দিরা গান্ধীর বিশ্বস্ত সৈনিকে পরিণত হন প্রণব। যার ফলে ১৯৭৩ সালে মন্ত্রিসভায় জায়গা পান তিনি। তাঁকে শিল্পোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। জরুরি অবস্থাতেও ইন্দিরার পাশে ছিলেন প্রণব। ১৯৮২ সালে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় ফিরলে অর্থমন্ত্রী হন প্রণববাবু। ১৯৮০ সালে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হন প্রণববাবু।

ইন্দিরাগান্ধীর হত্যার পর রাজীবের সঙ্গে মতানৈক্যের পর তাল কাটে। কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয় প্রণবকে। সেই সময় রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে একটি দল গঠন করেন তিনি। তবে তা তেমন সাফল্যের মুখ দেখেনি। ১৯৮৯ সালে ফের কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। কংগ্রেসের সঙ্গে জুড়ে যায় তাঁর দল।

১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধীর হত্যার পর কংগ্রেসে ফের সক্রিয় হন প্রণব। তাঁকে প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও। পরে তাঁর মন্ত্রিসভায় যোগ দেব প্রণব মুখোপাধ্যায়। নরসিংহ রায়ের মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান তিনি।

১৯৮৫ সালে প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন প্রণববাবু। ২০০০ সালে তাঁকে ফের এই পদ গ্রহণ করতে হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন তিনি। যদিও কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে রাজ্যের রাজনীতিতে উৎসাহ ছিল না প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। তিনি দিল্লির রাজনীতি ভালো বাসতেন।

২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আসন থেকে জিতে প্রথমবার লোকসভায় যান প্রণব মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা নির্বাচিত হন তিনি। কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হবেন না বলে ঘোষণা করলে প্রণববাবুর নাম নিয়ে জোর জল্পনা হলেও শেষ মুহূর্তে মনমোহন সিংয়ের নাম ঘোষণা করেন সোনিয়া। প্রণববাবু ব্রাত্য রইলেন।

২০০৭ সাল একই ভাবে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে জোর আলোচনা হয়। কিন্তু তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যহতি দিতে রাজি ছিলেন না মনমোহন সিং। ফলে সে যাত্রায় রাষ্ট্রপতি হওয়া হয়নি তাঁর।

মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন প্রণববাবু। অর্থ, প্রতিরক্ষা ও বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর ঘোষণা করেন প্রণব। এর পর কংগ্রেসের তরফে রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়। ২০০১২ সালের ২৫ জুলাই প্রথম বাঙালি হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৯ সালে তাঁকে ভারতরত্নে ভূষিত করে কেন্দ্রীয় সরকার।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সময় দিল্লিতে বাঙালির অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তবে জননেতা হিসাবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। সংসদীয় রাজনীতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রথমবার জনগণের ভোটে জিতে সংসদে যাওয়ার স্বাদ তিনি পান ২০০৪ সালে। মাত্র ২ বার জনগণের ভোটে জিতে সংসদে গিয়েছেন তিনি। নিন্দুকে যদিও বলে, তার সেই জয়ের পিছনেও অধীর চৌধুরীর ভুমিকা অপরিসীম।


আরও পড়ুন:

Follow Bangla Live on Facebook

Follow Bangla Live on YouTube