বাংলা নববর্ষ ১৪২৮: হালখাতার ইতিহাস
নববর্ষের দিনে দোকানে দোকানে বা ব্যবসায় হয় হালখাতা। বছরের হিসেব নিকেশ শুরু হয় পয়লা বৈশাখ থেকে। তবে বঙ্গাব্দের সূচনা কালে নববর্ষের অনুষ্ঠানের সঙ্গে হালখাতার কোনও সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু পরবর্তী কালে নববর্ষের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়ে হালখাতা লেখার ঐতিহ্য।
তবে কী ভাবে চালু হল হালখাতা?
ইতিহাস থেকে হালখাতা সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, তা হল— লাঙলের ব্যবহার শেখার পর মানুষ স্থায়ী বসবাস শুরু করে। কৃষিজাত দ্রব্য বিনিময়ের প্রথা শুরু হয় তখন। এই লাঙল বা হালের মাধ্যমে চাষের ফলে উৎপন্ন দ্রব্য সামগ্রী বিনিময়ের হিসেব একটি খাতায় লিখে রাখা হত। সেই খাতার নাম ছিল হালখাতা। হাল শব্দটি সংস্কৃত ও ফরাসি— দুটি থেকেই এসেছে। সংস্কৃতে হল বা হালের অর্থ লাঙল এবং ফরাসিতে হাল শব্দের অর্থ নতুন। বিশেষে দুটি অর্থই হালখাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
প্রাচীন কালের হালখাতার অনুকরণে জমিদারদের কাছ থেকে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য পুণ্যাহ চালু করেন সম্রাট আকবর। একই নিয়ম মেনে বাংলার নবাব মুর্শীদকুলি খাঁ পুণ্যাহ প্রচলন করেন। এসময় খাজনা বা রাজস্ব পরিশোধ করতেন সকলে। প্রাচীন কালের হালখাতা নবাবী আমলে নাম পাল্টে হয় পুণ্যাহ। কিন্তু পরবর্তী কালে হালখাতা নামটিই প্রচলিত হয়ে পড়ে।
হালখাতা আসলে রাজস্ব আদায়ের আর এক নাম। চৈত্র মাসের শেষে রাজস্ব পরিশোধ করে দেওয়ার রীতি চালু ছিল সেই আমলে। তারপর নববর্ষের দিনে শুরু হত নতুন হিসেব নিকেশ। সেই রীতি মেনেই এখনও পুরনো বছরের হিসেব মিটিয়ে নতুন বছরের হিসেব লেখা শুরু হয়। হালখাতা নামে এই রীতিই এখনও বাংলার প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও দোকানে পালিত হয়। লাল কভারের খাতার পুজো করে, প্রথম পাতায় স্বস্তিক এঁকে শুরু হয় নতুন বছরের হিসাব লেখা।