তৃৃণমূল ছাড়া অন্য কোথাও ভোট দিলে BJP-র লাভ, মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক রক্ষায় মরিয়া মমতা
লড়াইয়ে নামছেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি, আসাউদ্দিন ওয়েইসিরা। তার জেরে তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরলে সুবিধা পাবে বিজেপি। তাই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই রাজ্যের তিন মুসলিম-অধ্যুষিত জেলায় নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে ছুটলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, তৃণমূল ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দিলে আদতে বিজেপির শক্ত হবে।
মঙ্গলবার বহরমপুরের জনসভায় মমতা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আগামিদিনে সরকার গড়তে মুর্শিদাবাদ জেলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ জেলা – এবার কিন্তু প্রতিটি সিট আমাদের চাই। কোনও কারও কথা শুনে, সাম্প্রদায়িকতার জিগির শুনে (ভোট) দেবেন না। বিজেপি আবার কিছু কিছু মুসলিম অর্গানাইজেশনকে সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে টাকা তুলে পাঠিয়ে দেয় অশান্তি করার জন্য। অশান্তির মধ্যে দয়া করে যাবেন না, প্লিজ। মনে রাখবেন, আপনার একটা ভোট অন্য জায়গায় পড়লে সেই ভোটটা কিন্তু বিজেপির দিকে চলে যাবে। আপনার ভোটটা সিপিএম নয়, কংগ্রেস নয়, বিজেপি নয়, একমাত্র আপনার সিম্বল (প্রতীক) হচ্ছে তৃণমূূল, জোড়াফুল। একই বৃন্তে দুটি কুসুম, আমরা হিন্দু-মুসলমান।’
এমনিতে ২০১১ সালের জনসংখ্যা অনুযায়ী, রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২৭.০৭ শতাংশ। এবার বিধানসভা নির্বাচনে তা বেড়ে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। আর মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরে সেই মুসলিম জনসংখ্যা যথাক্রমে ৬৬.২ শতাংশ, ৫১.২ শতাংশ এবং ৪৯.৯২ শতাংশ। সেই তিন জেলায় এআইএমআইএমের অধিকাংশ সদস্য আছেন। আর দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় আব্বাস সিদ্দিকি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রভাব আছে। দু’দল জোট করবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। দু’দল আলাদাভাবে লড়লেও মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে যে কোপ পড়বে, তা আগেভাগেই আঁচ করেছেন মমতা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের ২২ টি বিধানসভা আসনের ১৬ টিতে এগিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি একটি আসনে এগিয়েছিল। উত্তর দিনাজপুরের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল তৃণমূল এবং বিজেপির। ন’টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়েছিল ঘাসফুল শিবির। মালদহে ছ’টি আসনে লিড ছিল বিজেপির। কংগ্রেস এবং তৃণমূল এগিয়েছিল যথাক্রমে চারটি এবং দুটি আসনে। সেই সময় অবশ্য আব্বাস-ওয়েইসিদের নিয়ে চিন্তা ছিল না তৃণমূলের। এবার তাঁরা ময়দানে চলে আসায় ভোট কাটাকুটিতে তৃণমূলের ঘরে সিঁধ কাটতে পারে বিজেপি। তাই বিজেপির বিরুদ্ধে মুসলিম ভোট এককাট্টা করতে নেমে পড়েছেন মমতা। রাজনৈতিক মহলের মত, তৃণমূল সুপ্রিমোর আকুতি থেকেই স্পষ্ট যে ভোট কাটাকুটির অঙ্ক নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে রীতিমতো উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন তিনি।