প্রেস, মিডিয়ার একটা ইজ্জত আছে: ‘দু পয়সার সাংবাদিক’দের পাশে দাঁড়ালেন মমতাও
দু’পয়সার প্রেস বলে সংবাদমাধ্যমকে অপমান করেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর এই বক্তব্যে নিন্দার ঝড় বইছে সমস্ত মহলে। তার পরও স্বাভাবিক উপায়ে ক্ষমা না চেয়ে টুইট করে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে। তাঁর পাশে দাঁড়াননি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বা সাংসদ নুসরত জাহানও। আর এবার মঙ্গলবারের এক জনসভা থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতি শ্রদ্ধা উজাড় করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোন খবর যাবে আর কোন খবর যাবে না, এমন নির্দেশ বিজেপি–র তরফ থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হয় বলে জানিয়ে রানিগঞ্জের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রেস, মিডিয়ার একটা ইজ্জত আছে। যেটা সত্য সেটা বলবেন। প্রেস, মিডিয়া আমাকে অনেক সাহায্য করে থাকে। কার কোথায় কী প্রয়োজন তা সব সময় তুলে ধরে সংবাদমাধ্যম। তা জানতে পেরে সে সব আমরা ডিএম, এসপি–দের বলি।’ এভাবেই কারও নাম না করে দলনেত্রী স্পষ্ট করে দিলেন, সাংসদের বিতর্কিত বক্তব্যকে তিনি কোনওভাবেই সমর্থন করেন না।
বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান এ ব্যাপারে বলেন, ‘ওঁর ওই মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। সংবাদমাধ্যম হল গণতন্ত্রের একটি শক্ত স্তম্ভ। ঝড়, বৃষ্টি, কোভিড— সব রুখে আমাদের বাংলার প্রেস বন্ধুরা মানুষের কাছে সঠিক খবর পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন এবং বিনোদনেরও কাজ করেন। কাউকে কোনওভাবে ছোট করা একদমই উচিত নয়।’
এদিকে, মহুয়া মৈত্রের মন্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে মঙ্গলবার পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলার মানুষ জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূলের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের বরাবরই একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এটুকু বলতে পারি, এটা ওঁর কথা, আমাদের দলের নয়। কখনও প্রেস আমাদের পক্ষে লেখে, কখনও হয়তো লিখতে পারে না, তার জন্য কিন্তু কারও সঙ্গে আমরা সম্পর্ক খারাপ করি না।’ সাংসদ মহুয়া মৈত্র ঠিক কী বলেছেন তা সম্পূর্ণ জেনে নিয়ে ফের সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলে এদিন জানিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, রবিবার গয়েশপুরে এক কর্মিসম্মেলনে মেজাজ হারিয়ে সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে? সরাও প্রেসকে এখান থেকে। কেন দলের মিটিংয়ে প্রেস ডাকো তোমরা? কর্মি বৈঠক হচ্ছে আর সবাই টিভি–তে মুখ দেখাতে ব্যস্ত। আমি দলের সভানেত্রী আমি আপনাদের নির্দেশ দিচ্ছি প্রেসকে সরান।’
আর একটি ভাইরাল ভিডিও–তে দেখা যাচ্ছে যে সভামঞ্চে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি সভানেত্রীর বার্তা, ‘আপনারা মোবাইল সরিয়ে রাখবেন। এটা ভিডিও রেকর্ডিং বা ছবি তোলার ব্যাপার নয়।’ সে সময়ই সংবাদমাধ্যমেক এক প্রতিনিধিকে ভিডিও রেকর্ড করতে দেখা গেলে মহুয়া মৈত্র তাঁকে রীতিমতো জেরা করেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘এখানে প্রেসের ঢোকার কোনও অনুমতিই নেই। আপনাকে এখানে ঢুকতে কে দিল?’
দু’পয়সার সাংবাদিক বলা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘আমি তো আপনাদের রেকর্ড করতে বলিনি। আপনারা এখন সেটা রেকর্ড করেছেন তাই বলতে হয়েছে।’ পরে এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে মজার ছলে টুইটে মিম শেয়া করে সাংসদ জানিয়েছেন, আমার মিম এডিট করার দক্ষতা ক্রমশ বাড়ছে। আর ওই মিমে লেখা, ‘আমার বেদনাদায়ক সঠিক মন্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’