মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক কি তৃণমূলের সঙ্গেই, একুশের নির্বাচনে বড় পরীক্ষায় নামছেন মমতা
২০১১-য় বাংলার ক্ষমতার অলিন্দে পা দেওয়ার আগে থেকেই মুসলিম তথা সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিজের করায়ত্ত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামফ্রন্ট থেকে মুখ ঘুরিয়ে সংখ্যালঘু মুসিলমরা মমতার দিকেই সমসর্থনের হাত বাড়িয়েছিল। আসন্ন ২০২১-এর নির্বাচনেও কি সেই সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে? এবারই প্রথমবার বড় পরীক্ষার সমানে মমতা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ছাড়ার পর থেকেই মুসলিমরা ঘুরে যেতে শুরু করে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে এনডিএতে থাকাকালীন বিজেপি-যোগসূত্রিতার কারণে বাংলার মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক থেকে দূরে ছিলেন মমতা। এনডিএ ছাড়ার পর মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের সমর্থনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠেন।
২০১১-য় সেই মুসলিম ভোটের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় এসেই তিনি বেশ কয়েকটি মুসলিম-নির্দিষ্ট নীতি চালু করেছিলেন। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর ছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাচার কমিটিকে মান্যতা দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, দেশের মুসলমানদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য মনমোহন সিংহ সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ওই সাচার কমিশন।
তৃণমূলই ফায়দা লুটেছিল ২০১১-য় পরিবর্তনের ভোটে
সাচার কমিশন বলেছিল, বাম-শাসিত বাংলায় মুসলমানরা আরও পিছিয়ে পড়ছে এবং আরও খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বাংলার মুসলমানরা প্রচলিতভাবেই বামপন্থীদের পক্ষে ভোটার ছিল। সাচার কমিশনের রিপোর্টটি ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। তৃণমূলই ফায়দা লুটেছিল পরিবর্তনের ভোটে।
মমতা যে সব মুসলিম-নির্দিষ্ট নীতি চালু করেছিলেন
ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি মুসলিম-নির্দিষ্ট নীতি চালু করেছিলেন। মমতার সরকার ইমাম এবং মুয়াজ্জিনদের ভাতার বন্দোবস্ত করেছে, মাদ্রাসায় ছাত্রীদের অধ্যয়নের জন্য বিনামূল্যে সাইকেল সরবরাহ করেছে, প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির মুসলিম শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বৃদ্ধি করেছে, মুসলিম ওবিসিদের রিজার্ভেশন দিয়েছে, রক্ষণশীল মুসলিম আলেমদের দাবিতেও মান্যতা দিয়েছে সরকার।
উর্দু দ্বিতীয় সরকারি ভাষা বেশ কয়েকটি জেলায়
এছাড়াও যে সব জেলায় ১০ শতাংশের বেশি উর্দু-ভাষাভাষি মানুষ আছেন, সেইসব জেলায় উর্দুকে দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। মমতা সরকার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন এবং জেলাগুলিতে মুসলিম মেয়েদের জন্য বিশেষ হোস্টেল নির্মাণ করে দিয়েছেন। এই কাজ শুরু হয়েছিল বামফ্রন্টের শাসন কালে।
মুসলমানদের বেশিসংখ্যায় টিকিট এবং মন্ত্রিসভায় স্থান
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে মুসলমানদের বেশিসংখ্যায় টিকিট দিয়েছিলেন। মুসলিম ধর্মকে সম্মান জানাতে মাথায় হিজাব পরতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। নামাজে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। জনসভায় বাংলার সাথে আরবি শব্দ মিশ্রিত করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। উর্দুভাষী মুসলমানদের গুরুত্ব দিয়েছিলেন, বামফ্রন্ট সরকারের তুলনায় তাঁর মন্ত্রিসভায় মুসলমানরা বেশি সুযোগ পেয়েছিল।
মুসলিম ভোট ব্যাংককে অক্ষুণ্ন রাখতে কঠিন চ্যালেঞ্জ
তবুও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১ সালের বেঙ্গল নির্বাচনে তার মুসলিম ভোট ব্যাংককে অক্ষুণ্ন রাখতে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন এবার। কংগ্রেস মুসলমানদের সমর্থন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। ওয়েইসি বাংলায় নজর দিয়েছেন বিহার ভোটে সাফল্য পাওয়ার পর। বাংলার মুসলিমদের একটি অংশ বাংলায় বিজেপির উত্থানে সহায়তাও করেছেন। ফুরফুরার পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নতুন দল গড়েছেন। সবই তাই আসন্ন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।