ডমিনিক লিভাকোভিচের সঙ্গে একান্তে আলোচনায় বসেন লুকা মদ্রিচ।
জাপানের বিরুদ্ধে তিনটে পেনাল্টি বাঁচানোর পর ব্রাজিল ম্যাচে আবার নায়ক। মোট ১২টি সেভ। গোলের নীচে সুপারম্যান ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার। কিন্তু ঠিক এক বছর আগে পরিস্থিতি মোটেই এরকম ছিল না। গত নভেম্বরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতাঅর্জন পর্বের ম্যাচ খেলতে নামার আগে ডমিনিক লিভাকোভিচের সঙ্গে একান্তে আলোচনায় বসেন লুকা মদ্রিচ। তার কয়েকদিন আগেই স্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে তাঁর ভুলে ২-২ হওয়ায় প্রথম একাদশে জায়গা খোয়ান ডায়নামো জাগ্রেবের গোলকিপার। তাঁর পরিবর্তে সুযোগ পান ইভো গ্রবিচ। এই ড্রয়ের ফলে কাতারের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায় ক্রোয়েশিয়ার। তারপর লিভাকোভিচের সঙ্গে কথোপকথনে মদ্রিচ তাঁকে বলেন, ‘তোমার ভাল না চাইলে আমি তোমাকে এইসব বলতাম না। কিন্তু আমি দেখতে পারছি যে জাতীয় দলে তুমি একেবারেই এগোচ্ছে না। হয়তো সেটা চাপের জন্যই। আবার হয়তো বা না। তবে তুমি নিজে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছো। যা দলের ওপরও প্রভাব ফেলছে। তুমি বুঝতে পারছ আমি কী বলতে চাইছি? তাই বলে কি তুমি কোনও ভুল করতে পারবে না? আমরা সবাই ভুল করি। আমার মনে হয় তুমি ভুল করতে ভয় পাও। একজনের নাম করো যে কোনওদিন কোনও ভুল করে না। আমি যেখানে আছি, সেখানে ভয় পেয়ে পৌঁছয়নি। এটা পরিস্থিতিতে আরও খারাপ করে তোলে। তুমি দারুণ গোলকিপার। তুমি নিজেও সেটা জানো। তাই না?’ মদ্রিচের এই কয়েকটা শব্দ লিভাকোভিচের জীবন বদলে দিয়েছে। হোটেলের লবিতে সেই কথোপকথনের এক মাসের একটু বেশি সময় পর বিশ্বকাপে জাপান এবং ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরা ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে টাইব্রেকারে তিনটে পেনাল্টি সেভের নজির গড়েন লিভাকোভিচ।
ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ানোর পর জেতার বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন মদ্রিচ। বেঞ্চে বসে পেনাল্টি শুটআউট দেখার সময় আত্মবিশ্বাসীও দেখায় ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ককে। এই বিষয়ে মদ্রিচ বলেন, ‘আমি কখনও ভাবিনি ক্রোয়েশিয়ার জার্সিতে এটাই আমার শেষ ম্যাচ। কারণ ম্যাচ টাইব্রেকারে যাওয়ার পর আমি দলের সবাইকে বলেছিলাম, লিভাকোভিচ বাঁচিয়ে দেবে।’ দল নেতার তাঁর ওপর এত বিশ্বাস। কী চলছিল ২৭ বছরের গোলকিপারের মনে? লিভাকোভিচ বলেন, ‘প্রথম পেনাল্টির আগে আমার পুরো ফুটবল জীবন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেই অনুভূতি আমি কোনওদিন ভুলব না।’ মৃদুভাষী ক্রোয়েশিয়ান গোলকিপার ছোটবেলায় বাস্কেটবল এবং ভলিবলেও ভাল ছিলেন। ২০১৫ সালে ডায়নামোতে যোগ দেওয়ার আগে জাগ্রেব ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস নিয়ে পড়তেন। তাঁর বাবা দ্রাভকো লিভাকোভিচ দেশের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন স্টেট সেক্রেটারি। একসময় পড়াশোনা ছেড়ে ফুটবলকে বেছে নেওয়ায় হয়তো খুশি হননি তাঁর পরিবার। কিন্তু আজ তাঁর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাবে। অপেশাদার দল এনকে জাগ্রেবে খেলার পর ২০১৭ অক্টোবরে ডায়নামোর প্রথম দলে খেলার সুযোগ পান লিভাকোভিচ। দু’বছরের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি মিনিট গোল না খাওয়াই রেকর্ড করেন ক্রোট কিপার। শুরুর বছরগুলোতেই মদ্রিচের পাশাপাশি ইকর ক্যাসিয়াসের নজর কাড়েন তিনি। ২০১৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তনী লেখেন, ‘এবছর আমি ডমিনিক লিভাকোভিচের খেলা দেখেছি। ও ডায়নামো জাগ্রেবে খেলে। ২৪ বছর বয়স। ইন্টারেস্টিং।’ ফাইনালের পথে একমাত্র বাধা মেসি। নেইমারকে আটকে দিয়েছেন, পারবেন কি আরেক তারকাকে আটকাতে? লিভাকোভিচ বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি বড় ম্যাচ খেলতে ভালবাসি। অ্যাড্রিনালিন, পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। তখনই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ করতে পারি।’ আজ রাতে গোলের নীচে আরও একবার কি নায়ক হয়ে উঠতে পারবেন লিভাকোভিচ? নেইমারের পর ২৭ বছরের ক্রোয়েশিয়ান কিপার কি আটকে দেবেন মেসিকেও?